রোগী জনবল সবই আছে, তবু গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’টি

পুরো বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে তিন মাস আগে স্থাপন করা হয় ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’। কিন্তু আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে এই আইসোলেশন সেন্টারটি। এ অবস্থায় চট্টলাবাসীকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই সেন্টারটির উদ্যোক্তারা।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক নুরুল আজিম রনি।

জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের গত তিন মাস ধরে সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম। তবে জনবল থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে এ আইসোলেশন সেন্টারটি। বিত্তশালীদের অনুদানে এ সেন্টারটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। যে কমিউনিটি সেন্টারে এটি গড়ে তোলা হয়েছিল গত তিন মাস ধরে মালিক তার কোন ভাড়া নেয়নি। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করায় কমিউনিটি সেন্টারটিও আবার চালু করা হচ্ছে বলে কথা জানা গেছে।
রোগী জনবল সবই আছে, তবু গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে 'করোনা আইসোলেশন সেন্টার’টি 1
এদিকে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’ এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ জনের অধিক করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ২২জন করোনা পজেটিভ রোগী এতে ভর্তি রয়েছে।

যেখানে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) নগরীর কোভিড-১৯ নির্ধারিত হাসপাতাল সমূহের দৈনিক ভর্তি রোগীর তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৬ জন, জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন, করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামে ২০ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২১ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৮ জন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২ জন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ৩ জন ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে শূন্য জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

১২ জন চিকিৎসক, ৭ জন নার্স ও ব্রাদার সহ ৫০ জনের স্বেচ্ছাসেবক দল রোগীদের সেবা নিয়োজিত রয়েছেন এই সেন্টারটিতে।

কমিউনিটি সেন্টার মালিকের ব্যবসার দিক বিবেচনা করে ও আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে এ আইসোলেশন সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময়ে চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সংকটের কথা চিন্তা করে দূর্যোগকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করি আমরা। আমাদের আইসোলেশন সেন্টারটি বিত্তশালীদের অনুদান আর জনগনের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছিল। আমাদের প্রতিমাসে ডাক্তার, নার্সদের ১০ লক্ষের অধিক টাকা বেতন দিয়ে আসছি। এছাড়া প্রতি মাসে রোগীদের জন্য ওষুধ, খাবারসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ সমপরিমাণ খরচ করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অনুদান সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
রোগী জনবল সবই আছে, তবু গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে 'করোনা আইসোলেশন সেন্টার’টি 2
এক প্রশ্নের জবানে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে বেসরকারী হাসপাতাল এখন রোগী ভর্তি করাতে বাধ্য। সরকারী হাসপাতালে করোনা উপসর্গ কিংবা করোনা পজেটিভ রোগী ভর্তি হয়ে যে সেবা পাবে তা প্রাইভেট ক্লিনিকে পাবে না। এখন সরকারী হাসপাতালে বর্তমানে প্রচুর সুযোগ সুবিধা তৈরী হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাবো কমিউনিটি সেন্টারের মালিক আবুকে। তিনি বিশাল অন্তরের একজন মানুষ। তিনি আমাদের গত তিনমাস ধরে ক্লাবটি কোন ভাড়া ছাড়াই ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন। তবে এখন আমরা উনার আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করেই আইসোলেশন সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!