রোগীর মৃত্যুর জেরে ন্যাশনাল হাসপাতালে তুলকালাম, বিরোধে জড়ালেন কাউন্সিলর গিয়াস ও শৈবাল

চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের ন্যাশনাল হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিল পরিশোধ নিয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাতটার এ ঘটনায় রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে ঠেকাতে বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিনের অনুসারী স্থানীয় ‘পোলাপাইন’ হাসপাতালে অবস্থান নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ফ্রি স্টাইলে বিল না দিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় ন্যাশনাল হাসপাতাল, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও শৈবাল দাশ সুমনের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।

কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও শৈবাল দাশ সুমনের পাল্টাপাল্টি
কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন ও শৈবাল দাশ সুমনের পাল্টাপাল্টি

জানা যায়, গত রোববার দুপুরে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় স্ট্রোকের রোগী মমতাজ বেগমকে (৫০)। তিনি আসকারদিঘীর পাড়ের হবি বাবুর্চির স্ত্রী। রোববার সন্ধ্যায় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয় মমতাজ বেগমের। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা বিল মওকুফ করে দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ মানতে রাজি ছিল না। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

জানা যায়, গণ্ডগোলের আশংকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাউন্সিলর গিয়াসের গ্রুপের ৭০ জন ‘পোলাপাইন’ অবস্থান নেয় ন্যাশনাল হাসপাতালে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ৮৪ হাজার টাকা বিল মওকুফের ব্যবস্থা করেন।

রোগীর আত্মীয় রুবেল খান ইমরান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। রোগী বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা ধার করে বিল পরিশোধ করতাম। তাই বিল মওকুফের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে শৈবাল দাশ সুমন ভাই এসে সমস্যার সমাধান করেন।’

জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘লোকজন ভীড় করছে—এলাকাবাসীর কাছে এমন খবর পেয়ে আমি ন্যাশনাল হাসপাতালে যাই। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে রোগীর বিল ৮৪ হাজার টাকা মওকুফ করা ছাড়াও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি। মৃতের দাফন-কাফনের টাকাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দেওয়ার জন্য বলেছি। মৃতের একজন ছেলেকে চাকরি দেওয়া যায় কিনা তা দেখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে।’

বক্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ করেননি ন্যাশনাল হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. আবু নাছের। তবে ওই হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিকালের পর আমি হাসপাতালে ছিলাম না। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’

এ ব্যাপার জানতে চাইলে ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার আলাদা করে কোন পোলাপাইন নেই। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমি সন্ধ্যায় সিআরবিতে ইফতার মাহফিলে ছিলাম। একটু আগে আমাকে এলাকার লোকজন ফোন করে জানাল, শৈবাল দাশ সুমন বিল না দিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে গেছেন।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এভাবে সন্ত্রাসী স্টাইলে হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তি সঙ্গত? আমার এলাকাবাসীদের মধ্যে এটা নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে।’

জবাবে জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় আমার ওয়ার্ডের এক রোগীর মৃত্যু এবং টাকার জন্য তার লাশ আটকে রাখা হয়েছে—এমন অভিযোগ পেয়ে আমি সেখানে ছুটে যাই। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, এরকম ঘটনা ঘটেনি। তবে মৃতের স্বজনদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা বিল দিতে পারছিল না। এ কারণে লাশ গ্রহণেও জটিলতা দেখা দেয়। পরে আমার অনুরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানবিক বিবেচনায় ৮৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল মওকুফ করে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই নিজেদের উদ্যোগে লাশ মৃতের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এর বাইরে তো আমার আর কোনো ভূমিকা ছিল না।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!