রেল নিরাপত্তা বাহিনীতে ঘুষে চলে বদলি, শাস্তি মাফ হয় টাকায়

অভিযোগের তীর চিফ কমান্ড্যান্টের দিকে

হ্যান্ডকাফসহ আসামি পালানোর ঘটনায় ক্লোজ হওয়া রেল পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার শাস্তির বদলে হলেন পুরস্কৃত। একই স্থানে ১০ বছর চাকরি করে ক্লোজ হওয়া ব্যক্তিকে ঘুষের বিনিময়ে পুনরায় একই স্থানে বদলি করা হয়েছে। রেল পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘিরে এমন সব অবিশ্বাস্য ঘটনাই শুধু নয়, আছে পদোন্নতি বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগও। আর যার দিকে সবসময়ই উঠছে অভিযোগের তীর— তিনি হলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম।

বিভিন্ন সময়ে ওঠা বিপুল অভিযোগের পর জহিরুল ইসলামকে চলতি বছরের ৩১ মে চট্টগ্রাম থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আদেশে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। কিন্তু হঠাৎ সেই আদেশ স্থগিত করা হয়। স্থগিতাদেশের পর থেকে আবারও সেই পুরনো অনিয়মে ডুব দেওয়ার অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলায় হ্যান্ডকাফসহ মোহন গাজী নামে এক আসামি পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ইনচার্জ হাবিলদার খোরশেদ আলমকে ক্লোজ করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি তার ইনক্রিমেন্টও স্থগিত করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, খোরশেদ ১০ বছর একই স্থানে চাকরি করে আসছেন। তিনি ক্লোজ হওয়ার পর ওই স্থানে হাবিলদার রবিউল হোসেনকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু অভিযোগে জানা যায়, মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে রবিউলের পদায়ন আদেশ বাতিল করে পুনরায় একই স্থানে খোরশেদকে বহাল করা হয়।

হাবিলদার খোরশেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘দুই-তিন বছর এ স্থানে চাকরি করছি। চিফ কমান্ড্যান্ট অফিসার আমার শাস্তি মওকুফ করেছেন।’ ঘুষের মাধ্যমে বদলি ও শাস্তি মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর রাতে রেলের ফিস প্লেটসহ পূর্বাঞ্চলের অধীনে চাঁদপুর ইউনিট বাহিনীর সদস্যরা দুই চোরকে আটক করে। তাদেরকে ইনচার্জ হাবিলদার খোরশেদ আলমের কাছে সোপর্দ করা হয়। তার হেফাজত থেকে মোহন গাজী নামে এক আসামি হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যায়। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে ২৬ সেপ্টেম্বর চিফ কমান্ড্যান্টের নির্দেশে আরএনবি ট্রেনিং সেন্টার চট্টগ্রামে ক্লোজ করা হয় খোরশেদকে। গুঞ্জন উঠে, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি খোরশেদের ভায়রা। তাই খোরশেদ তাকে ছেড়ে দেন। পরে এ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন আরএনবির চিফ কমান্ড্যান্ট।

তদন্ত শেষে কমিটি খোরশেদকে শাস্তিস্বরুপ একটি ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করে। ১৮ অক্টোবর বিভাগীয় রেলওয়ে তত্ত্বাবধায়কের (পূর্ব, ডিআরএম) মৌখিক নির্দেশে খোরশেদের জায়গায় হাবিলদার রবিউল হোসেনকে পদায়ন করা হয়। ওই আদেশে মোট ১৩ জনকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়।

সরকারি রেকর্ডপত্র অনুযায়ী হাবিলদার খোরশেদ চাঁদপুর আরএনবি ইউনিটে দীর্ঘ ৯ বছর ৫ মাস দায়িত্ব পালন করে গেলেও তাকে কোথাও বদলিই করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী একই পদে সর্বোচ্চ ২ বছর থাকার কথা। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তা ৩ বছরও হতে পারে।

২৬ অক্টোবর চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম ক্লোজ হওয়া হাবিলদার খোরশেদকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে পুনরায় চাঁদপুর ইউনিটে আগের কর্মস্থলে ফেরত পাঠান।

১৯ অক্টোবর জারি হওয়া আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ দিলে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। বাহিনীর সদস্যদের অভিযোগ, মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে জহিরুল ইসলাম বদলি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

২৭ অক্টোবর আরেকটি আদেশের মাধ্যমে তাদের বদলি বাতিল করা হয়। আদেশে উল্লেখ করা হয়, আপিল বিবেচনায় তাদের বদলি বাতিল করা হল। যদিও আইন অনুযায়ী আপিল বিবেচনার এখতিয়ার রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপকের। তাকে না জানিয়েই ‘আপিল বিবেচনা’ করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে নগরীর ষোলশহর ও পটিয়ায় জনবল নিয়োগ ও স্টেশনের টিকেট কালোবাজারি থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

আরএনবির কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে হাবিলদার রবিউল হোসেনকে পদায়ন করেছি, শাস্তিও দিয়েছি।’

অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তির পরিবর্তে কিভাবে পুরস্কৃত হল, শাস্তি মাফ করে তাকে পুনর্বহাল কে করলো— এমন প্রশ্নের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যসহ আইনকানুনের তোয়াক্কা না করার বিষয়ে সরেজমিনে চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলামের দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি শুনেছি। আরএনবির চিফ কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!