‘রেল কর্তার ক্ষমতার দাপট’ গার্ড প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতিতে অনিয়মই নিয়ম, অসহায় নিয়োগবিধি

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গার্ড প্রশিক্ষণ ও পদন্নোতিতে নিয়োগবিধির কোন অক্ষরই মানছেন না রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। এক মন্ত্রীকে নিজের বন্ধু পরিচয়ে কথায় কথায় দাপট দেখান তিনি। এছাড়া ক্ষমতার দাপটে অনেক কর্মচারীকে বদলি করিয়ে নিজের অবস্থানকে জানান দেওয়ার অসংখ্য নজিরও রয়েছে।

জানা যায়, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পূর্ব) স্নেহাশিস দাশগুপ্ত এবার অনৈতিক সুযোগ নিয়ে গার্ড প্রশিক্ষণে পাঠালেন দুজনকে, যারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেননি।

২০২০ সালের নিয়োগবিধিতে ওই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে ৪ বছর পূর্ণ হওয়া এবং চাকরি স্থায়ীকরণ হওয়ার শর্ত রয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পরিবহন বিভাগে গার্ডশিপ মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা (পূর্ব) স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত ৫ জনের স্থলে ৬ জনের নাম প্রেরণ করেন। এর মধ্যে তালিকায় থাকা এএসএম পদে ৪ ও ৫ নং ব্যক্তি যথাক্রমে শফিকুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমানের চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। তাদের চাকরির মেয়াদ ৪ বছর পূর্ণ হয়নি। কিন্তু বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা (পূর্ব) বিশেষ ক্ষমতাবলে নিয়োগবিধি ২০২০ অমান্য করে এ দুজনকে প্রশিক্ষণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।

জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে শুরু হওয়া গার্ড প্রশিক্ষণে রেলওয়ের ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাকশী, লালমনিরহাট, প্রতি বিভাগ থেকে ২০ জন করে মোট ৮০ জন অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পরিবহণ বিভাগ (পূর্ব) থেকে ৫ জন অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ৬ জনকে পাঠানো হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি স্নেহাশীষ দাশগুপ্তের দেয়া ছাড়পত্রে ২০২০ সালের নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ওই চিঠিতেই তিনি উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের নিয়োগবিধিতেই বলা হয়েছে গার্ডশিপ ট্রেনিংয়ের জন্য ন্যূনতম ৪ বছরের ওপরে এএসএম, বুকিং এসিস্টেন্ট, পার্সেল এসিস্টেন্ট, গুডস এসিস্টেন্ট, গ্রেড ২ কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শফিকুল ইসলাম রনি ও হাবিবুর রহমান (এএসএম) তাদের চাকরির মেয়াদ ২ বছর এবং চাকরি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু যোগ্যদের বাদ দিয়ে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এ ২ জনকে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন স্নেহাশিষ দাশগুপ্ত।

হাবিবুর রহমান (এএসএম) জানান, তিনি ২০১৯ সালে চাকরিতে নিয়োগ পান। শফিকুল ইসলামও একই সালে নিয়োগ পান বলে জানান। ঘুষ দিয়ে অবৈধ সুযোগ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুজনই ফোন কেটে দেন। এরপর আর কেউ ফোন ধরেননি।

বদলী বাণিজ্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, কন্ট্রোল আদেশের দোহাই দিয়ে পরিবহণ কর্মকর্তা ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের এক সপ্তাহেই স্টেশন মাস্টারসহ ৩০/৪০ জনকে বদলী করেছেন।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশিষ দাশগুপ্তের কাছে জানতে বেশ কয়েকবার ফোন ও খুদে বার্তা দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার কার্যালয়ে গেলেও তিনি সাক্ষাত দেননি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সর্দার শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘আইন বহির্ভুত কাউকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। অনৈতিকভাবে অর্থগ্রহণের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!