‘রেলে লবিং দাপট’ বদলির ৪ বছর ধরে আঁকড়ে আছেন একই পদ

সরকারি কর্মকর্তাদের একই পদে সর্বোচ্চ ৩ বছর থাকার নিয়ম থাকলেও রেলে কোন কোন কর্মকর্তার বেলায় তা প্রযোজ্য হয় না। বরং বদলি হয়েও লবিং এর মাধ্যমে আদেশ স্থগিত করে থেকে যান বছরের পর বছর। এমন অভিযোগ ওঠে এসেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (পাহাড়তলী) জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময়ের বিরুদ্ধে।

শুধু একই পদ ৪ বছর ধরে আঁকড়ে ধরে আছেন তা নয়, নিজের ক্ষমতা জাহির করতে যথেষ্ট সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও লাগিয়েছেন নতুন ৮টি সিসি ক্যামেরা। সরকারি অর্থের অপচয় করে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেন ক্ষমতাধর এ কর্মকর্তা।

সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিআরবি টেলিকমিউনিকেশন দপ্তরে গিয়ে বদলী এবং তা আবার স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তদবীরের মাধ্যমে ২ বার বদলী আদেশ স্থগিত করেছেন এ প্রকৌশলী।

জানা যায়, রেল ভবন সংস্থাপন শাখা ১, ঢাকার উপ-পরিচালক (ই ১) হাসিবুল মাহমুদ ২৮ মে ২০১৯ সালে এক দপ্তরাদেশে ৫ কর্মকর্তাকে বদলী করেন। আদেশে পাহাড়তলীর সংকেত টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (পূর্ব) জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময়কে ঢাকা টঙ্গী সেকশনের প্রকল্পে বদলী করে তার স্থলে এবিএম শরীফ হোসেন টিসিই (পূর্ব) চট্টগ্রামকে স্থলাভিষিক্ত করেন। কিন্তু এ আদেশ স্থগিত করতে ডিএসটি জাহেদ আরেফিন দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কৌশলে সময়ক্ষেপন করেন। রেলে উধ্বর্তন পর্যায়ে কর্মরত তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তদবির করে ৩মাস পর ওই আদেশ তিনি স্থগিত করেন বলে অভিযোগে জানা যায়।

টেলিকমিউনিকেশন দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুনিয়র শরীফ সাহেব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলে, অল্প কিছুদিন সময় চাইলে সরল মনে তিনি সিনিয়রের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তা মেনে নেন। কিন্তু এটাই কাল হয় তার জন্য। দায়িত্ব বুঝে নিতে অনুরোধ করলে ক্ষেপে যান জাহেদ আরেফিন, তার ৩মাস পর শুনি আদেশ স্থগিত। শরীফ হোসেন সিআরবির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে বিচার দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

ঘটনার সত্যতা জানতে শরীফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

১৮ আগস্ট ২০১৯ সালে জারিকৃত স্থগিতাদেশে বলা হয়, চট্টগ্রামের ডিএসটি টেলিকম চৈতী মুহুরী বিসিএস বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করে যোগদান না করা অবধি পূর্বের দপ্তরাদেশ স্থগিত থাকবে। তবে বিধিনুযায়ী স্থগিতাদেশের কার্যকারিতা মেয়াদ ৬ মাস হলেও ১৮ আগস্ট জারি করা স্থগিতাদেশ দেড় বছর পরও বহাল রয়েছে।

এদিকে, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) দপ্তরে আগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ১৬টি সিসি ক্যামেরা ভিতরে ও বাইরে স্থাপন করা আছে। উক্ত দপ্তরের ভিতরে বাণিজ্যিক দপ্তর, সংস্থাপন, বিদ্যুৎসহ অনান্য দপ্তর বিদ্যমান থাকলেও চলতি মাসে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে জাহেদ আরেফিন নতুন করে আরো ৮টি সিসি ক্যামেরা তার দপ্তরে স্থাপন করেন। এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী কোনো বক্তব্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিভাগীয় রেল তত্ত্বাধায়ক শামস তুষারের মুঠোফোনে কল ও এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।

রেল পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার বিষয়টি বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ভালো জানেন।’ একই পদে ৪ বছর ও বদলীর পরেও দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!