রেলে অনিয়মের পদোন্নতি পরীক্ষা, ফল আগেই নির্ধারিত!

নীতিনির্ধারক দুই কর্মকর্তা নেই, তবু তড়িঘড়ি পরীক্ষার আয়োজন

পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীকে পদোন্নতি দিতেই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ৬০ দিন আগেই জানানোর কথা থাকলেও মাত্র ১০ দিনের নোটিশে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনায় তারা বিস্মিত। তারা অভিযোগ করে বলেন, এখানে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তারা ইতিমধ্যে নানা সূত্রে জেনেছেন।

নিয়ম ভেঙেই স্টেশন মাস্টার পদোন্নতি পরীক্ষার তোড়জোড় চলছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে। অথচ পদোন্নতি কমিটির সদস্য সচিব সিরাজ রয়েছেন ছুটিতে। আর প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা সম্প্রতি বদলি হয়ে চলে গেছেন রাজধানীতে। এমন অবস্থায় সোমবার ২৯ এপ্রিল পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে রেল কর্তারা।

কমিটির প্রথম সারির কর্মকর্তাদের ছুটিতে রেখে তড়িঘড়ি পরীক্ষায় নিয়ে শংকায় রয়েছে পরীক্ষার্থীরা। স্বজনপ্রীতিসহ আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান পরিবহন কমকর্তার ও পদোন্নতি কমিটির আহবায়কের বিরুদ্ধে।

স্টেশন মাস্টার গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-২ পদোন্নতি পরীক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা গ্রহণের কমপক্ষে দুই মাস আগে নোটিশ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মাত্র ১০ দিনের নোটিশে নেওয়া হচ্ছে সেই পরীক্ষা। এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ জন প্রার্থী সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছেন না তারা।

স্টেশন মাস্টার গ্রেড পদোন্নতি পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীকে পদোন্নতি দিতেই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ৬০ দিন আগেই জানানোর কথা থাকলেও মাত্র ১০ দিনের নোটিশে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনায় তারা বিস্মিত। তারা অভিযোগ করে বলেন, এখানে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তারা ইতিমধ্যে নানা সূত্রে জেনেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সংস্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী গ্রেড-৩ পদে যাদের চাকরি ২ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করতে হবে। দরখাস্তের সিনিয়রিটি অনুযায়ী এক পদের বিপরীতে চারজনকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। অতীতে জেটিআই (জুনিয়র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) এবং স্টেশন মাস্টার গ্রেড-২ পদোন্নতি পরীক্ষায় দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস এ নিয়ম ভঙ্গ করে ঘুষ ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও স্টেশন মাস্টার অভিযোগ করেছেন, সুজিত কুমার বিশ্বাস একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে তাদের মাধ্যমে অগ্রিম ঘুষ গ্রহণ করে পদোন্নতি পরীক্ষা শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। অনুমোদনকারী কর্মকর্তা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা না থাকা এবং কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র পারসোনাল অফিসার সিরাজ উল্লাহ ছুটিতে থাকা অবস্থায় কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে স্টেশন মাস্টারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া ২০১৭ জেটিআই পদে পদোন্নতি পরীক্ষায় রেলের ডিজির গঠিত তদন্ত কমিটি সিরাজ উল্লাহর বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল এবং তাকে এ ধরনের কোন কমিটিতে না রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এসব বিষয় আমলে না নিয়ে পুনরায় দুর্নীতি করতে স্টেশন মাস্টার গ্রেড-২ পদে পদোন্নতি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহমেদ এবং অতিরিক্ত পরিবহন কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সাড়া মেলেনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!