রেলের ৫ হাজার কর্মচারীর পরিবারকে বিপাকে ফেলে ফয়’স লেকে মাছচাষের খায়েশ কনকর্ডের

ফয়’স লেকে এবার মাছচাষ করার খায়েশ হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের। এজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় মাছচাষ করা যায় কিনা যাচাই-বাছাই করতে ইতোমধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চিঠিও দিয়েছে। অথচ এই লেক হতে দৈনিক ৩৫ লাখ গ্যালন পানি শোধন করা হয়। এসব পানি ব্যবহার করে রেলওয়ের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মচারী ও তাদের পরিবার। এই লেকে মাছচাষ করলে পানির গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই লেকসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৩৩৬.৬২ একর জায়গা নিয়ে ২০০৫ সাল থেকে মামলা চলছে কনকর্ডের। মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (১১ মে) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান ভূসম্পদ দপ্তর হতে ফয়’স লেকে মাছচাষে অনুমতি চাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করা হয়।

জানা যায়, ২০০৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের ৩৩৬.৬২ একর জায়গা ৫০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয় কনকর্ডকে। তবে শর্তভঙ্গের কারণে রেলপথ মন্ত্রণালয় এই লিজ বাতিল করে। কিন্তু লিজ বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল করে প্রতিষ্ঠানটি। হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন অবস্থায় এবার তারা লেকে মাছচাষ করার আগ্রহ দেখায়। এজন্য অনুমতি চেয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এই বিষয়ে মতামত দিতে গত ৭ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পূর্বাঞ্চল পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে।

আরও জানা যায়, কনকর্ড, রেল ও পর্যটন কর্পোরেশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। সেই চুক্তির পর একের পর এক শর্ত ভঙ্গ করতে থাকে কনকর্ড। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রেল সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ১০ম সংসদের ৩৫তম বৈঠকে শর্তভঙ্গের কারণে ৫০ বছরের এই লিজ চুক্তি বাতিল হয়। একই বছর ১৫ অক্টোবর চুক্তি বাতিল বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ নেয় কনকর্ড। ওই সময় থেকে আড়াই বছর এভাবে বিনাখরচে রেলের জায়গায় একক আধিপত্য চালায় কনকর্ড। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর আবারও ৬ মাস স্থগিত আদেশ পায় তারা।

অথচ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গণমাধ্যমে সরব ছিল।

এদিকে রেলওয়ের সঙ্গে কনকর্ডের ৫০ বছরের লিজ চুক্তি অনুযায়ী শর্ত ছিল, লেকের পানিতে চলাচলরত বোটগুলো ব্যাটারি দিয়ে চালানোর। কিন্তু কনকর্ড কর্তৃপক্ষ ব্যাটারির পরিবর্তে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনবোট ব্যবহার করে যাচ্ছে। এর ফলে বোট থেকে নির্গত তেল লেকে মিলে পানিদূষণ হচ্ছে।

এ বিষয়ে কনকর্ডের পরিচালক শাহ কামালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পানির গুণগতমান নষ্ট না করে মাছচাষ করার অনুমতি দেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।’

হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন অবস্থায় কীভাবে মাছচাষের বিষয়ে কনকর্ডের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে−জানতে রেলওয়ের আইন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদের মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি একবারও ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, ‘শুনেছি কনকর্ড মামলা প্রত্যাহার করবে, তবে এ বিষয়ে কোনো কাগজ আমি পাইনি।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কমিটি যাচাই-বাছাই করে মতামত দিলেই মাছচাষের অনুমতি মিলবে।’

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!