রেলের সেল ডিপোতে শেড নির্মাণ, টেন্ডার স্থগিতের বছর গড়ালেও খোলেনি রহস্যের জট

রেল পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী সরঞ্জাম দপ্তরের অধীনে রয়েছে দুটি সেল ডিপো। রেলের অপ্রয়োজনীয় লোহা, পিলারসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ এইসব ডিপোতে এনে রাখা হয়। মূলত বিশাল এলাকাজুড়ে খোলা মাঠই রেলের ডিপো, যেখানে রাখা হয় এসব যন্ত্রাংশ। ডিপোর প্রায় পুরো এলাকা আগাছা আর লতাগুল্মে ভরে গেছে। দেখে মনে হতে পারে যেন ঘন জঙ্গল।

ফলে এখানে যেমন সাপ-বিচ্ছুর বসতি গড়ে উঠেছে তেমনি বেড়েছে চোরের উপদ্রব। সরঞ্জাম ডিপো থেকে রেলের মূল্যবান সামগ্রী চুরি হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। গত ২০ সেপ্টেম্বরও দুই চোরকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে গত বছরের জুনে সরঞ্জাম দপ্তরের ডিপোতে দুটি শেড নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিলও করে। কিন্তু সে দরপত্র খোলার আগেই ‘রহস্যজনক কারণে’ স্থগিত হয়ে যায়। এরপর রি-টেন্ডার (পুনঃদরপত্র) হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি। মাঝখানে বছর গড়িয়ে গেছে, কিন্তু খোলেনি রহস্যের জট।

জানা গেছে, প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেল ডিপোতে ২টি শেড নির্মাণে দরপত্র আহবান করে রেলওয়ে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকায় বড় ও ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় ছোট শেড নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, নকশায় ত্রুটি থাকার কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বস্থ একটি সূত্র বলছে, ঠিকাদারদের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে বাতিল হয়ে যায় শেড নির্মাণের দরপত্র।

সূত্র জানায়, ৮ কোটি টাকার বড় শেড নির্মাণের জন্য দরপত্র জমা দেয় এসএ কর্পোরেশন, অপরটির জন্য দরপত্র জমা দেয় এসএনবি কর্পোরেশন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কর্ণফুলী বিল্ডার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার নামে আরকেটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিলে স্থগিত হয়ে যায় টেন্ডার প্রক্রিয়া।

জানতে চাইলে এসএনবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী জাফর আহমেদ বলেন, শুনেছি নকশায় ত্রুটির কারণে টেন্ডার স্থগিত করা হয়েছে। কর্ণফুলী বিল্ডার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্স এর স্বত্বাধিকারী তানিম বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ না পেলে কি করবো। অফিস যদি কারো পক্ষে থাকে তাহলে কাজ পাওয়া কঠিন।

নকশায় ত্রুটি থাকার বিষয় জানালে তিনি বলেন, যদি নকশায় ত্রুটিই থাকবে তাহলে রেল কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহবান করলো কেন।

এসএ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী শাহ আলমের মুঠোফোনে কল-এসএসএম করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সেল ডিপো ইনচার্জ গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘শেড নির্মাণ না করায় একদিকে চুরি বেড়েছে অন্যদিকে ঘন জঙ্গল পরিস্কার না করায় এটি কি ডিপো নাকি সবুজ বনায়ন তা বোঝা মুশকিল।’

রেল পূর্বাঞ্চলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘শেড দুটি নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। টেন্ডার কী কারণে হচ্ছে না সেটি জানি না। শেডের কারণে মূল্যবান যন্ত্রাংশ খোয়া যাচ্ছে।’

পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সুবক্তগীন বলেন, ‘কাজ দুটি স্থগিত করা হয়েছে। দ্রুত পুনঃদরপত্র আহবান করা হবে।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!