রেলের ভূমি উদ্ধার করে দিতে চান পাহাড়তলীর কাউন্সিলর হিরণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেদখলে থাকা শত শত একর ভূমি যেখানে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর আগেই নিজ ওয়ার্ড থেকে রেলওয়ের ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারদলীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি প্রায় ৬০ ভাগ ভূমি রয়েছে এই পাহাড়তলী ওয়ার্ডে। স্থানীয় কাউন্সিলরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ স্থানীয় কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দখলদারদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ আসে। তবে পাহাড়তলীর কাউন্সিলরের সহযোগিতা করতে হবে না উনি যদি উচ্ছেদের পক্ষে থেকে চুপ থাকেন সেটাই অনেক বড় বিষয়।

এরআগে গত ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএমের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে কাউন্সিলর হিরণ উল্লেখ করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ পূরণে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঘোষিত ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি বাস্তবায়নের আমি একজন সক্রিয় অংশীদার। ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে রেলওয়ের মালিকানাধীন ভূমিতে অযাচিত ও অপরিকল্পিতভাবে অবৈধভাবে গড়ে উঠা এই ভিশন বাস্তবায়নের অন্যতম অন্তরায়। এই ওয়ার্ডের প্রায় ৬০ ভাগ ভূমির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে রেলওয়ের সর্ববৃহৎ পাহাড়তলী কারখানা, রেলওয়ের একাধিক আবাসিক কলোনি, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রেল কর্মকর্তার দপ্তর রয়েছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এসব স্থাপনা ছাড়াও এই ওয়ার্ডে ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার তদানীন্তন ইউরোফিয়ান ক্লাব বর্তমানে ডিইএন -১ এর দপ্তর। মাদার তেরেসা চ্যারিটেবল হোম, বধ্যভূমি, আই ইনফরমারি হাসপাতাল, ইমপেরিয়াল হাসাপাতাল, ডায়বেটিকস হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়, চক্ষু হাসপাতাল, কিডনি ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ রয়েছে এই ওয়ার্ডে। এছাড়া আবহাওয়া অফিস, আরএনবি ট্রেনিং সেন্টারসহ অনেক গুরুত্ব স্থাপনা রয়েছে।’

কাউন্সিলর হিরণ বলেন, ‘নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডে বর্তমান মেয়রের মেয়াদে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এরপরও রেলওয়ের কলোনি ও স্থাপনাকে ঘিরে এক শ্রেণীর দখলদার আশপার্শ্বের পতিত ভূমিতে অবৈধভাবে বস্তি ও স্থাপনা গড়ে তোলে। অসংখ্য কাচা ঘর ও খোলা পায়খানার ফলে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ওয়ার্ড গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ভিশন ২১ ও ৪১ বাস্তবায়নে এবং মেয়র আ জ ম নাছিরের ক্লিন সিটি গ্রীন সিটির শতভাগ নিশ্চিতকরণে রেলওয়ের ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব অবৈধ স্থাপনা ঘর বস্তি উচ্ছেদ করার জন্য অনুরোধ করছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবেও আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকতে একটি হেলদি ওয়ার্ড গঠনে রেলওয়ের এই উদ্যোগে।’

১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও খুলশী থানা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন হিরণ হেলদি ওয়ার্ড গঠনের জন্য রেলওয়ের ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে পত্রটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।

এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় অভিযোগ আসে আমি কাউন্সিলর বলেই আমার লোকজন কিংবা আমি রেলওয়ের ভূমি দখল করে রাখছি। বিষয়টি যে মিথ্য সেটা প্রমাণ করার জন্যই আমিই নিজ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। প্রয়োজনে রেলওয়েকে উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করব। আমি চাই পাহাড়তলী ওয়ার্ডটি একটি হেলদি ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হোক।’

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহাড়তলী ওয়ার্ডে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কয়েক একর ভূমি উদ্ধার করেছি। এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদে বাধা যেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, সেখানে এখন যেহেতু কাউন্সিলরই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে উনি নিজেই তা উচ্ছেদ করতে বলেছেন তাহলে বিষয়টি আরও ইজি হয়। এরপরও উনার সহযোগিতা বলতে কাউন্সিলর চুপ থাকলেই হবে আমরা আইনগতভাবে আমাদের ভূমি উদ্ধার করব।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!