রেলের চাকুরে লক্ষ্মীপুরের ছেলে চট্টগ্রাম উত্তর ছাত্রলীগের পদে

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন মো. জুবায়ের ইসলাম। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায় হলেও তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ছাত্রলীগের পদ। শুধু তাই নয়, তিনি আবার চাকরি করেন রেলওয়েতে। রাজনীতি থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার টাঙানো—সবই করেন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নামে। জুবায়েরের মতো এমন পদ পাওয়া অনেক নেতার বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগ। তবে ঢাকা থেকে তেমন যাচাই না করে প্রায় নেতার নাম ঘোষণা হওয়ার কারণে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়েছে বলে জানান উত্তরের একাধিক ছাত্রনেতা।

রোববার (৩১ জুলাই) রাতে ঘোষণা করা হয় উত্তর জেলা ছাত্রলীগের ৩১৬ সদস্যের ‘জাম্বো’ কমিটি। দীর্ঘদিন পর ঘোষণা করা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ নতুন কমিটিতে সরকারি চাকরিজীবী, বহিরাগত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের পদ দেওয়া অভিযোগ উঠেছে। এ কমিটিতে শুধুমাত্র সহ-সভাপতি করা হয়েছে ৮৩ জনকে।

জানা গেছে, মো. জুবায়ের ইসলামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ফতেহ ধর্মপুর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল রেলওয়ে ভবনে (সিআরবি) চিফ কন্ট্রোল অব স্টোরসে (সিওএস) অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাকে রেলওয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৯ হাজার ৩০০ টাকা বেতনে নিয়োগের অফার লেটার দেওয়া হয়।

জুবায়েরের বাবা সিরাজুল ইসলামও চাকরি করেন রেলওয়েতে। তিনি বাবার সঙ্গে সিআরবি এলাকাতেই থাকেন। তার বাবা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে জুবায়ের রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নামে ব্যানারও টাঙিয়েছেন।

তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংবিধানে উল্লেখ আছে, কোনো চাকরিজীবী ছাত্রলীগের পদ-পদবিতে থাকতে পারবে না।

উত্তর জেলাতে অসংখ্য যোগ্য ছাত্রনেতা থাকার পরও কেন লক্ষ্মীপুর থেকে এনে নেতা বানানো হলো—এমন প্রশ্ন উত্তরের ছাত্রনেতাদের।

এ বিষয়ে উত্তরের একাধিক ছাত্রনেতা জানান, জুবায়ের মূলত রাজনীতি করতো উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির হোসেন চৌধুরী তপুর। বিশেষ কারণে সবসময় তপুর সঙ্গে থাকতো জুবায়ের। সেজন্য হয়তো তপু পছন্দের মানুষ হিসেবে জুবায়েরকে পদে এনেছেন।

আবার আরেক ছাত্রনেতা তপুকে টিপ্পনি কেটে বলেন, ‘জুবায়েরের একটি বাইক আছে। সেই বাইকে জুবায়ের সবসময় তপুকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রি ট্রান্সপোর্ট সুবিধা দিয়ে থাকেন। তাই হয়তো তপু ‘ড্রাইভার কোটায়’ তাকে পদ দিয়ে থাকতে পারেন।

উত্তরের বাসিন্দা না হয়েও কিভাবে পদ পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে জুবায়ের বলেন, ‘আমার বাড়ি লক্ষ্মীপুর। কিন্তু আমার বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে থাকি। এছাড়া আমি উত্তর জেলায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আইআইইউসি) লেখাপড়া করি। সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। আমি সেখানকার ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি কখন হবে তার কোনো ঠিক নেই, তাই উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমিসহ আমার ভার্সিটির তিনজনকে উত্তর জেলার নেতা বানিয়েছেন। যদিও বাকি দুজনের বাড়ি উত্তর জেলার ফটিকছড়িতে।’

আইআইইউসিতে পড়লে উত্তর জেলার কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো উত্তরের একটি ইউনিট ছিল। আমরাও দীর্ঘদিন উত্তরের সঙ্গে মিলে রাজনীতি করেছি। কিন্তু হঠাৎ কেন্দ্র ঘোষণা দিলো, আমরা নাকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্ত। তাই কমিটি কবে হয় তা ঠিক না হওয়ায় আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে উত্তরের কমিটিতে আনা হয়েছে।’

রেলের চাকরি ও রেল শ্রমিক লীগের রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রেলওয়েতে চাকরি করি না। ওটা আমার নামে ষড়যন্ত্র। আমার বাবা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই বাবা যেহেতু কমিটিতে আছেন তাই অনেকে খুশি হয়ে ব্যানার-পোস্টারে আমার নাম-ছবি ব্যবহার করে থাকেন। আসলে আমি তাদের বারণ করি, তারপরও তারা খুশি হয়ে এগুলো করে। কতজনকে বারণ করা যায় বলেন?’

জুবায়েরের বিষয়ে জানতে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তপুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পরে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জুবায়েরের বিষয়ে কথা বলতে চাননি তিনি। পরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘ওর (জুবায়ের) বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো সম্পর্কে তপুই ভালো বলতে পারবে। যেহেতু তাকে তপুই নেতা বানিয়েছে। ওর বিষয়ে সে ভালো জানবে।’

উত্তরের বাসিন্দা না হয়েও আইআইইউসিতে পড়েই উত্তর জেলার নেতা হওয়া যায় কিনা—এ প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল বলেন, ‘না, সে (জুবায়ের) যদি এখানকার ভোটার না হয় তবে সে কখনও উত্তরের পদ পেতে পারে না। আর তার বিশ্ববিদ্যালয়তো আমাদের জেলার অন্তর্ভুক্ত না।’

জুবায়েরের সরকারি চাকরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে যদি সত্যিই সরকারি চাকরি করে থাকে তাহলে তার তো ছাত্র রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যদি প্রমাণ হয় তবে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুপারিশ করব ব্যবস্থা নিতে।’

তবে চাকরির বিষয়টি অস্বীকার করলেও জুবায়েরের একাধিক সহকর্মী তার চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক সহকর্মী বলেন, ‘জুবায়ের অনেকদিন ধরে সিআরবির চিফ কন্ট্রোল অব স্টোরসে (সিওএস) অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন। তবে তিনি কেন মিথ্যা বলছেন তা আমি জানি না।’

এ বিষয়ে আরও জানতে তিনি জুবায়েরের চিফ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে চিফ অফিসার আনোয়ার ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

এ প্রসঙ্গে উত্তরের এক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘এবার যে কমিটি হয়েছে সেটিতে যতগুলো নাম এসেছে তার অধিকাংশ কেন্দ্রের নেতারা দিয়েছেন। এখন তারা ঢাকায় বসে তো আর জানবে না কে ভালো, কে খারাপ। তাই কেন্দ্রের নেতারা কমিটি দিতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা করে ফেলেছেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!