রেলের ‘গামছা পার্টি’ ৩ মিনিটেই যাত্রী খুন করে হাতিয়ে নেয় সব, ৪ স্পট ভয়ংকর

রেললাইনের পাশে ৬ মাসেই ৬১ জনের লাশ

নিরাপদ ভ্রমণের অন্যতম মাধ্যম ট্রেন। অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় যাত্রীদের ঝুঁকি কম ট্রেনে। কিন্তু সম্প্রতি ট্রেনে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘গামছা পার্টি’। যাত্রীদের টার্গেট করে মাত্র ৩ মিনিটে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করে তারা। সব লুট করে ট্রেন থেকে ফেলে দেয় লাশ। এ কাজ করে মাত্র ৩-৪ জনের গ্রুপ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গত ছয় মাসে নারী-পুরুষ মিলে অজ্ঞাত ৬১ জনের লাশ পাওয়া গেছে রেললাইনের আশপাশে। আর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চারটি স্টেশনে বেশি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো কসবা, আখাউড়া, ভৈরব ও নরসিংদী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যমতে, এসব অজ্ঞাত ব্যক্তির গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার পর ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি থেকেও গামছা পার্টি অনেক ভয়ঙ্কর।

জানা গেছে, ঈদ আসলেই তৎপর হয়ে ওঠে গামছা পার্টি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের মধ্য থেকে টার্গেট খুঁজে তারা। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে চারজন। এরপর ওঁৎ পেতে থাকে শিকারের উদ্দেশ্যে। বিশেষ করে কোনো যাত্রী যখন ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অথবা বাথরুমে যায় তখনই হামলা চালায় এই গ্রুপের সদস্যরা। কৌশলে ট্রেনের দরজা খুলে মুহূর্তেই দু’জন দু’দিক থেকে যাত্রীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে টান দেয়। আর এ সুযোগে আরেকজন যাত্রীর পকেটে থাকা সবকিছু হাতিয়ে নেয়। এরপর যাত্রী মারা গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ট্রেন থেকে। এ কাজ করতে তারা সময় নেয় মাত্র ৩-৪ মিনিট।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পুলিশের থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৪ জন, আখাউড়া থেকে সিলেট ১৯ জন এবং ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পাওয়া ১৮ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে মামলায় রেকর্ড করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চারটি স্টেশনে বেশি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো কসবা, আখাউড়া, ভৈরব ও নরসিংদী। এসব অজ্ঞাত লাশ ময়নাতদন্তের পর ধর্ম অনুযায়ী সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। পরিচয় শনাক্তের জন্য পরিধান করা কাপড় সংরক্ষণ করা হয়। লাশের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলে বেওয়ারিশের তালিকায় লেখা হয়।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) সেকেন্ড অফিসার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘গত ছয় মাসে ২৪ জনের অজ্ঞাত লাশ মিলেছে। যাদের মধ্যে শুধুমাত্র দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।’

ভৈরব স্টেশন রেলওয়ে পুলিশের সেকেন্ড অফিসার রুবেল বলেন, ‘গত ছয় মাসে অজ্ঞাত তিন নারীসহ ১৮ লাশ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একটিরও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।’

আখাউড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আখাউড়া হতে সিলেটে ছয় মাসে পাঁচ নারী ও ১৪ পুরুষসহ মোট ১৯ জনের অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিন নারী ও আটজন পুরুষের পরিচয় শনাক্ত হলেও আটজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।’

চট্টগ্রাম জেলা রেল পুলিশের এসপি হাসান চৌধুরী বলেন, ‘স্টেশনগুলোতে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও গামছা পার্টি থেকে সাবধান থাকতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। ঈদ এলে এসব পার্টির তৎপরতা বাড়ে। এক্ষেত্রে যাত্রীরা সচেতন হলেই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!