রেলের উচ্ছেদ নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য

রেলওয়ের চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। উচ্ছেদ ঠেকাতে অবৈধ দখলদারদের সঙ্গে চলে রেল কর্মচারীদের লেনদেন। যে যত বেশি টাকা দেবে তার দোকানের স্থায়ীত্ব তত বেশি। এভাবেই টাকার গরমে আটকে যায় রেলের ভূমি উদ্ধার অভিযান।

জানা যায়, রেলের প্রচুর পরিমাণ ভূমি বেদখল হয়ে আছে। এসব উদ্ধারে প্রায়ই অভিযান চালায় রেল পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পদ বিভাগ। কিন্তু অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদের পর আবারো অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। আর ঘন ঘন উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে ওইসব স্থাপনার দখলদাররা মোটা অংকের টাকা দেন রেলের ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনকে। উচ্ছেদের শিকার প্রায় ২০ জন লোক তাকে টাকা দেন। এছাড়া বিভাগীয় ভূসম্পদ সার্ভেয়ার সালামকেও দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। এসব টাকা লেনদেনের পেছনে নাটের গুরু স্থানীয় কামরান ওরফে ডিস কামরান নামের এক ব্যক্তি।

টাকা দেওয়ার পরও মঙ্গলবার (৩১ মে) সকাল ১০টায় খুলশীর ঝাউতলা টাংকি এলাকায় প্রায় শতাধিক দোকান ও অবৈধ স্হাপনা ভেঙে ৮০ শতক জায়গা উদ্ধার করে রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পদ দপ্তর। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।

কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানে সেই ডিস কামরানের জেন্টস পার্লার, ক্রোকারিজের, কসমেটিক ও কাপড়ের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেনি রেলওয়ে। এরপর ভুক্তভোগী দোকানদারদের মনে ক্ষোভ বাড়তে থাকলে টাকা দেওয়া বিষয়টি জানা যায়।

ভুক্তভোগী দোকানদাররা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি দোকান থেকে উচ্ছেদ না করার জন্য ডিস কামরানের কথা অনুসারে রেলে ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনকে ১৫ থেকে ২০হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্ছেদের সময় তাকে ফোন করা হলে মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে গত ৩০ মে কামরানের সঙ্গে রেলওয়ের সার্ভেয়ার সালামের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ আসে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার সালাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমার সঙ্গে কামরানের কোনো যোগাযোগ নেই। ভিডিও ফুটেজের কথা বলতেই চুপ হয়ে যান তিনি।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেও সেগুনবাগান ৪ নম্বর লেনে রেলের জায়গায় অবৈধ দ্বিতল ভবন নির্মাণকাজ চলমান ছিল। অবৈধ এই নির্মাণকাজে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন রেলকর্মী মেহেদী। এ বিষয় ভূসম্পদ দপ্তর খুলশী থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও, নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল দখলদাররা। ভূসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি থানায় ফোন দেন।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’

রেল সার্ভেয়ার সালামের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ জমা পড়ে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ছিল চট্টগ্রাম পুরাতন স্টেশন ও নতুন স্টেশনে অবৈধ স্থাপনা থেকে মাসোহারা, পাহাড়তলী রেল স্টেশনে রেলের জায়গায় অবৈধ গোডাউন, নির্মাণের সুযোগসহ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

অবৈধ ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ইতোপূর্বে সালামকে বদলি করা হলেও কিছুদিন পর তিনি আবার সেই দপ্তরে ফিরে আসেন।

সালামের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, ‘অর্থের লেনদেনের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অচিরেই অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’

তবে রেলের সার্ভেয়ার সালামকে চেনেন না বলে দাবি করেন কামরান। কিন্তু ভিডিও ফুটেজের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার দু’তলা বিল্ডিংয়ের ডিস অফিসটি অবৈধ। তবে টাকা-পয়সা লেনদেন বা রেলওয়ের সালামকে চিনি না।’

রেলের ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার নামে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান কামরান।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!