রেলের অনিয়মের আখড়া মার্শালিং ইয়ার্ড শাহআলম সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে

রেল পূর্বাঞ্চল মার্শালিং ইয়ার্ড দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক বিভাগের অস্থায়ী শ্রমিকদের নির্যাতন করে টাকা আদায়, মালামাল পাচার, ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে নিম্নমানের মালামাল গ্রহণসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী শাকের আহম্মেদের ছত্রছায়ায় উপসহকারি প্রকৌশলী শাহআলম সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার রেল মার্শালিং ইয়ার্ডে শাহআলমের নেতৃত্বে মেকানিক ফিটার আনোয়ার বিরুদ্ধে জয়দেব (২৭) নামের অস্থায়ী এক খালাসীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য নির্যাতন করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

রেল পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী শাকের আহম্মেদের প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট প্রধান শাহআলমের নেতৃত্বে ১৬ জন নিয়ন্ত্রণ করছে মার্শালিং ইয়ার্ড।

সিন্ডিকেট প্রধান শাহআলম ছাড়া আরও ১৬ সদস্যরা হলেন- আশিষ কুমার রক্ষিত (সেফ টিএল), আনোয়ার হোসেন (মেকানিক্যাতল ফিটার গ্রেড-১), মো মানিক (ইলেকট্রিক মিস্ত্রি গ্রেড-২), ওবায়দুল হক (ইলেকট্রিক মিস্ত্রি গ্রেড-২), নুর ইসলাম (এলই গ্রেড-১), জালাল উদ্দিন (এফএএস বিএ গ্রেড-২), মানছুর মিযা (এলই গ্রেড-২), মো. মিলন (ইলেকট্রিক ফিটার গ্রেড-৩), জাহিদুল হক (এলই গ্রেড-২), আব্দুর রহিম (ইলেকট্রিক ফিটার গ্রেড-৩), সালাউদ্দিন সালু (খালাসী), নুর আলম (খালাসী),নুর হোসেন শিবলু (খালাসী), রবিউল হাসান (খালাসী), তাজু (টিএলআর খালাসী) ও পাপ্পু (টিএলআর খালাসী)

জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী বৈদ্যুতিক বিভাগের অধীনে ৩০ জন (অস্থায়ী) খালাসী নিয়োগ পায়। এতে দৈনিক ৪২৫ টাকা বেতনে নিয়োগ পাওয়া জয়দেব (২৭) নামে মার্শালিং ইয়ার্ডের এক খালাসীকে শাহআলম মেকানিক্যাল ফিটার আনোয়ারের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। জয়দেব বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপর বাকি ১০ হাজার টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় জয়দেবকে মারধর করে আটকে রেখে বাসায় গিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করেন।

এ বিষয়ে জয়দেবের কাছে জানতে চাইলে সে অস্বীকার করে। তবে জয়দেব বিষয়টি তার এক সহকর্মীর কাছে স্বীকার করলে কৌশলে বক্তব্যটি রেকর্ড করা হয়। তাতে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের বিষয়টি স্পষ্ট উঠে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, ৬টি আন্তঃনগর ও ৩টি মেইল ট্রেনে মসজিদের পাওয়ার কারে যাত্রী বহন করতে বাধ্য করেন শাহআলম সিন্ডিকেট। এ জন্য শাহআলম ও আশিষকে ট্রেন প্রতি দৈনিক ১ হাজার টাকা দিতে হয়। এতে দৈনিক গড়ে ৮ হাজার টাকা করে মাসে ২ লাখ টাকার বেশি আয় করেন তারা।

এদিকে, মার্শালিং ইয়ার্ডে নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন পদে ১৭ জন চাকরি না করে বেতন-ভাতা ভোগ করেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের দৈনিক টিএ বিল তুলে দিতে হয় ওই সিন্ডিকেটের হাতে। এছাড়াও রেলের ১৫ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী একটি পুকুরে মাছ চাষ করলে শাহআলম সিন্ডিকেট তাদের হটিয়ে দখল করে নেয় সেই পুকুরটিও। তাছাড়া মালামাল চুরিসহ নানা অপকর্ম ও লাখ লাখ টাকার দুনীতির সাথে জড়িত এ সিন্ডিকেট।

আরও অভিযোগ রয়েছে, মালামাল সরবরাহের দরপত্রে কোনও কোম্পানির নাম উল্লেখ না থাকলেও বিভাগীয় প্রকৌশলী শাকের আহমেদ তার পছন্দের কোম্পানির পণ্য কিনতে বাধ্য করেন। এতে তিনি ওই কোম্পানির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন। এ বিষয়ে জানতে তাকে এসএমএস করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, শাহআলম সিন্ডিকেট ২০০৪ সালে এবং পরবর্তী ২০১৮ সালে ইয়ার্ডের ভেতর নিজেদের একটি অফিস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হয়। পরে সেই টাকা তারা চারজন মিলে লোপাট করে। ফলে আর অফিস করা হয়নি। তবে সেই সময়ে লাগানো অফিসের সাইনবোর্ডটি এখনও গাছে ঝুলতে দেখা গেছে।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহআলম এসএসএই উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। তবে ৬ বছর একই স্থানে চাকরির কথা স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!