বাজেট ছিল অপ্রতুল। আবার বছরেরও বেশি সময়জুড়ে চলছে করোনার হানা। কিন্তু এসব বিষয় প্রভাব ফেলেনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকান্ডে। উল্টো গড়েছে তারা উন্নয়নের রেকর্ডও।
কিলোমিটারের পর কিলোমিটার নির্মাণ করেছে তারা রেলপথ। নির্মাণ হয়েছে শতাধিক কালভার্ট। মাত্র দুই বছরে ১৯টি নতুন রেলস্টেশন, ৫৭২টি রেলসেতু এবং ৪১১টি লেবেল ক্রসিং গেট নির্মাণ করে তাক লাগিয়েছে রেলওয়ের এই বিভাগটি। পুরনো জীর্ণ রেললাইন সংস্কারের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে একের পর এক মিটার গেজ রেললাইনকে রূপান্তর করেছে তারা ব্রডগেজে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার পরিবহনের সুবিধার্থে ১২ কিলোমিটার সাইডিং লাইন নবায়ন, আখাউড়া -কুলাউড়া সেকশনে ৫২টি সেতু, কুলাউড়া -সিলেট সেকশনে ১৭টি সেতুর অকেজো স্লিপারসহ পিওয়ে ফিটিংস পরিবর্তন হয়েছে এ দুই বছরে।
এছাড়া আখাউড়া-কুলাউড়া সেকশনে ১৯টি সেতু মেরামত, নির্মাণ ও পুঃনির্মাণ করা হয়েছে।চট্টগ্রাম-আখাউড়া ১৫০ কিলোমিটার রেলপথে করা হয় ট্র্যাক টেম্পিং।
এছাড়া রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রেলওয়ের ভূমি পুনরুদ্ধার ও বাউন্ডারি নির্মাণ করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি সীমানা রক্ষায় এ বিভাগের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার কাটা তারের বেড়া।
এছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন রেলপথের ম্যাকানাইন্ড মেইনটেনেস কাজের অংশ হিসেবে ৮ থেকে ১৬টি অকেজো টেম্পিং মেশিন মেরামত করে সচল করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-ছাতক সেকশনের রেললাইনকে মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রুপান্তর করা হয়। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে ৭৫ কিলোমিটার ট্র্যাক টেম্পিং করা হয়।
পাশাপাশি ঢাকা-নারায়নগঞ্জ, টংগী-নরসিংদী, টংগী-শ্রীপুর, টংগী-আশুগঞ্জ সেকশনে নতুন করে ৩৯টি ব্রীজের স্লিপার পরিবর্তন করা। ঢাকা বিমান বন্দর রেলস্টেশনে প্লাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হয়। লস্করপুর-মাইজগাঁও সেকশনে ২০ কিলোমিটার রেললাইন পরিবর্তন করা হয়।
আখাউড়া- কুলাউড়া সেকশনে ৫২টি রেল সেতুর অকেজো স্লিপার ও ফিটিংস পরিবর্তন করে লাগানো হয় নতুন স্লিপার ও ফিটিংস। একই সেকশনে মোট ১৭টি সেতুর স্লিপার ও ফিটিংস পরিবর্তন করা হয়। এই সেকশনে মেরামত, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় মোট ১৯টি সেতু। কুলাউড়া-সিলেট সেকশনে মোট ৪টি সেতু নির্মাণ, মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করা হয়।
এছাড়া জরাজীর্ণ ব্রীজবুক সংরক্ষণ করে নতুন ব্রীজবুক নির্মাণ। প্রায় ৬৫০০টি ইআরসি লাগানো হয়েছে এই দুই বছরে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ২০০টি পিসি স্লিপার ও পি-ওয়ে ফিটিংস পরিবর্তন করা হয় এ সময়ের মধ্যেই।
অনান্য কাজের মধ্যে রয়েছে, ষোলশহর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রেললাইন পিসি স্লিপার ও ৩ হাজার কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট স্প্রেডিং। এই রুটে রেলের গতি ৩০ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটারে উন্নীত করন।
ষোলশহর-দোহাজারী রুটে ৫ হাজার ৫০০ মিটার রেলপথ ব্যালাস্ট স্প্রেডিং করা হয়। টঙ্গী-নরসিংদী ৩৩ কিলোমিটার ম্যাকানাইন্ড টেম্পিং করা হয়। ঢাকা-টঙ্গী রুটের জীর্ণ স্লিপার করে দেওয়া হয় পরিবর্তন। চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড সেকশনে (ডাবল লাইন) ৭৬ কিলোমিটার ও টঙ্গী-নরসিংদী সেকশনে ৩৩ কিলোমিটার ম্যাকানাইন্ড, ব্যালাস্টিং ও টেম্পিং করা হয়।
টঙ্গী ব্রিজের মাত্রাতিরিক্ত জরাজীর্ণ স্লিপার পরিবর্তন করে নতুন স্লিপার স্থাপন করা হয়৷ এছাড়া ঢাকা স্টেশন ইয়ার্ডের অকেজো স্লিপার পরিবর্তন করে ১২ কিলোমিটার রেলপথ ম্যাকানাইন্ড, ব্যালাস্টিং ও টেম্পিং করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-টঙ্গী জয়দেবপুর সেকশনে ১৪ হাজার কিউবিক মিটার, জামালপুর সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সেকশনে ৫০০০ কিউবিক মিটার, ভৈরব-নরসিংদী ২৫ হাজার কিউবিক ব্যালাস্ট স্প্রেডিং করা হয়। ১১ দশমিক ১০ কিলোমিটার রেল লাইনের শ্যালো স্ক্রিনিং কাজ সম্পাদন ছাড়াও প্রায় ১ লাখ ঘন ফুট রেলপথ ব্যালাস্ট স্প্রেডিং করা হয়।
বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) পূর্ব আব্দুল হানিফ বলেন, ‘রেলওয়ের কর্মী ও ঠিকাদারদের আন্তরিকতায় আমরা রেলওয়ের মৌলিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। যদিও এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা আমাদের থমকে দিতে চেয়েছিল। সামনে দিনগুলোতেও আমাদের সংশ্লিষ্টদের সাথে রেলওয়ের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) সবুক্তগীন এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহামারী করোনার মধ্যেও শ্রমিক, ঠিকাদাররা আন্তরিকতার সাথে সমানতালে কাজ করেছে। এ কারণে ব্রীজ, কালভার্ট,সেতু, রেললাইনে সংস্কার ও মেরামত হয়েছে আশানুরূপ। ২০২০-২১ অর্থ বছরে লকডাউনের কারণে এখনো কিছু কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অচলাবস্থার অবসান হলে কাজের অগ্রগতি নিরুপণ সম্ভব হবে।।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ এই দুই বছরে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় যথা ক্রমে ২৮ কোটি ৪২লাখ ও ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ দুই অর্থ বছরে এই বরাদ্দ অপ্রতুল হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ করেছে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ।
২০২০-২১ অর্থবছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এ বিভাগটির পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে যাত্রী সেবা নিশ্চিত, নতুন স্টেশন নির্মাণ ও মেরামত, ট্রেনের গতি বৃদ্ধি করে সময় কমিয়ে আনা, মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে রুপান্তর, রেললাইন সংস্কার, নতুন লাইন নির্মান, সেতু ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ মেরামত, লোকোমোটিভ ও কোচ আমদানি করে ঘাটতি পূরণ, ওয়াগন সংগ্রহ ও প্লাটফর্ম উচুকরণের মত বেশকিছু প্রকল্প।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগে যান্ত্রিক বিভাগের চেয়ে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শত প্রতিকুলতায়ও রেল পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের কর্মতৎপরতায় গত ২ বছরের বরাদ্দ বাজেট ও কাজের অগ্রগতির পরিসংখ্যান অনেক সমৃদ্ধ।’
এমএফও