রেলে ১২ বছরের চাকরিতেই বিপুল সম্পদ জোবেদা আক্তারের

তদন্তে নামলো দুদক

চাকরি মাত্র ১২ বছরের, এরই মধ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কোটি টাকার কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি টাকার মূল্যের রেলওয়ে ১২০টি সিসি ক্যামেরা প্রকল্পে নিম্নমানের ক্যামেরা কিনে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। তিনি জোবেদা আক্তার— রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ একটি নয়, আছে আরও অনেক।

মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে ৮৬৩ জনকে খালাসী পদে অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২। এতে জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে খালাসী নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বর্তমানে তদন্ত করছে দুদক।

চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি জোবেদা আক্তারকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। সেখানে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের ট্রেনিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান জোবেদা আক্তার। চাকরির ১২ বছরের মাথায় নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ ও বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা, নগরের খুলশী এলাকায় একটি আলিশান ফ্ল্যাট, টিএম ট্রেডার্স নামীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে তার রয়েছে ২৫% শেয়ার ও ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি হাইয়েস গাড়িসহ ঢাকা জেলায় জারা এপারেলস নামের একটি গার্মেন্টসেও তিনি শেয়ার কেনেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে এক কোটি টাকার ১২০টি সিসি ক্যামেরা প্রকল্পে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক সময়ে ৮৬৩ অবৈধ খালাসী নিয়োগ ও নানা অভিযোগ আসার পর ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি রেলওয়ের সংস্থাপন শাখার এক আদেশে নগরের হালিশহর ট্রেনিং একাডেমি থেকে সিআরবিতে তাকে বদলি করা হয়। এতে তার শাস্তি হওয়ার পরিবর্তে উল্টো তাকে সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর এক কর্মকর্তা বলেন, খালাসী নিয়োগের ঘটনায় জোবেদা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাকে আবার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) জোবেদা আক্তার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সম্পদের যে হিসাব তুলে ধরেছেন, তা সঠিক না। এছাড়া ১২০টি সিসি ক্যামেরার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা অন্য বিভাগের।’ বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রতিবেদককে পরামর্শও দেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অবৈধভাবে ৮৬৫ জন খালাসী পদে নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। এরপর এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়োগের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগ দেওয়া হয় অনিয়ম, তদবির ও মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন করে। এ ঘটনায় পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম, ডজনখানেক কর্মকর্তা, ও রেলওয়ের ঠিকাদারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এতে এই রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তারের নামও উঠে আসে দুদকের তদন্তে।

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!