চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকা মানুষদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌছে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে চালু করা ‘হোম সার্ভিস’ হটলাইনে অযাচিত কল করছেন অনেকেই। ঘরে থাকা নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে খোলা এসব হটলাইনে কেউ কেউ ফোন করে মাছ, মাংস পৌঁছে দেওয়ার আবদার করছেন। আবার কেউ ফোন করছেন আসলেই সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা পরীক্ষা করতে— এমনটাই জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
অপ্রয়োজনে কিংবা নিছক মজা করতে এসব হটলাইনে ফোন করা থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সিএমপির কর্তাব্যক্তিরা। তারা বলছেন, এতে করে পুলিশের সেবা দেওয়ার মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকার রাখার আহবানও জানাচ্ছেন তারা।
করোনা প্রতিরোধে ‘স্টে হোম’ কর্মসূচিতে ঘরে থাকা মানুষদের খাবার, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পেতে সহযোগিতা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নগরীর ১৬ থানায় এই হটলাইন নাম্বার (০১৪০০-৪০০৪০০) খুলেছে সিএমপি। এর আওতায় প্রত্যেক থানার ওসিসহ তিনটি নাম্বার দেওয়া হয়েছে সহায়ক হটলাইন হিসেবে। এসব নাম্বারে ফোন করলেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া, অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসাসেবায় সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়ার কথা জানিয়েছে সিএমপি। ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় বাজার পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রম ‘ডোর টু ডোর শপ’ নামেও পরিচিত।
গত কয়েক দিনে অনেকেই এসব হটলাইনে ফোন করে সেবা নিয়েছেন। দুদিন আগে নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকায় একজন প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ওই থানার ওসির গাড়িতে করে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও পৌছে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকগুলো। তবে এর বাইরে অনেকে এসব হটলাইনে কল করছেন একেবারেই অপ্রয়োজনে।
জানা গেছে, একদিন আগে সিএমপির পাহাড়তলী থানায় একজন ফোন করে জানান তার চার কেজি চাল লাগবে। চাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার ঠিকানা চাইতেই তিনি পুলিশকে জানান যে তার আসলে চাল লাগবে না। তিনি কল করেছেন হটলাইনে কল করলে সেবা মেলে কিনা তা দেখতে।
পাহাড়তলী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কিছু বেদরকারি কল এসেছে। কেউ ফোন করে বলছে তার মাস্ক লাগবে। আবার কেউ কেউ বলছে তার বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে দিতে— পুলিশ নিয়ে সে বাজারে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসবে। কাল একটা কল এসেছে আমাদের ডিউটি অফিসার ধরেছেন। ডিউটি অফিসারের কাছে ওসির নাম্বার চান ওই লোক। ওসির নাম্বার কেন এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন তার বিরিয়ানি খাওয়ার পরে লালখান বাজারের পান খাওয়ার অভ্যাস আছে। আজ তার বাসায় বিরিয়ানি রান্না হয়েছে। কিন্তু পান আনার জন্য লালখান বাজার যাওয়ার উপায় নেই। তাকে লালখান বাজার থেকে পান এনে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে কথা বলতে চান তিনি।
একই থানায় আরও একজন ফোন করে জিজ্ঞেস করেন পুলিশের ডোর টু ডোর শপ কী রকম? তার বাসার সামনে ‘ডোর টু ডোর শপ’ নিয়ে যাওয়া যায় কিনা— তিনি একটু দেখেশুনে কিনতে চান।
ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, ডবলমুরিং থানায় একজন ফোন করেছেন পাঁচফোড়ন পাওয়ার আবদার জানিয়ে।
অন্যদিকে খুলশী থানায় একজন ফোন করে জানান তার মাছ লাগবে। তিনি মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারেন না— এমনটাই জানিয়েছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী। পরে ওই ব্যক্তিকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য সেবা দেওয়া হয় না বলে জানানো হলে তিনি রাগারাগি করে ফোন রেখে দেন।
এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় কল পাওয়ার কথা স্বীকার করে সিএমপির উপ কমিশনার বিজয় কুমার বসাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেশ কিছু কল এসেছে যেগুলো অস্বস্তিকর। তবে এই ধরনের কলের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তাছাড়া এই ধরনের কল আসবে এটা ধারণায় ছিল আমাদের। কিন্তু এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় কল সেবাদানের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের স্বার্থেই এই সেবা চালু করেছি আমরা।’
এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় কল করা থেকে নাগরিকদের বিরত থাকতে অনুরোধ করছেন সিএমপির কমিশনার মো: মাহবুবর রহমানও। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ঘরে থাকাকে নির্বিঘ্ন করতে এই সেবা চালু করা হয়েছে। এটা সবার স্বার্থেই। কাজেই এই কাজে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করি আমরা। জরুরি সেবার জন্য নাগরিকরা অবশ্যই কল করবেন। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কল করলে যারা এই সেবার সাথে সংযুক্ত তাদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। আমরা সবার কাছ থেকে সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।’
এআরটি/সিপি