রিমান্ডের পাঁচ দিন/ রিপনের মুখে সেই একই কথা, ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিতেও রাজি

কারাগারের ভেতর খুন হওয়া দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী হত্যামামলায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাঁচ দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও একই কথা বলে গেছেন অভিযুক্ত রিপন নাথ। অমিত খুনের কারণ হিসেবে গত পাঁচ দিন ধরেই ‘রাগের মাথায়’এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও ডিবির নানা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি। এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে আগামীকাল মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও রাজি হয়েছেন রিপন নাথ। তবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরেই তদন্তকাজ এগিয়ে নিচ্ছেন ডিবির তদন্ত দল।

এর আগে গত সোমবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে হাজির করা হয় রিপন নাথকে। এ সময় প্রথমে তাকে জেলারের অমিত হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদনের শুনানি হয়। আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। পরে রিপনকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরপর গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে রিপন অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে নানা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন। সব প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, ঘুমের স্থান পরিবর্তন করতে অমিতের চাপ, অপমান ও গালিগালাজ করায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে রাগের মাথায় অমিতকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার আচরণ অস্বাভাবিক বলেও লক্ষ্য করেছেন তদন্ত দল।

তবে ডিবির তদন্ত দল তার কাছে গত পাঁচ দিনের রিমান্ডে যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর বের করার সংকল্প করেছিল তার কতটুকু পেরেছে তার জন্য ১৬৪ ধারা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এগুলো হচ্ছে রিমান্ডে রিপনের কাছে গত পাঁচ দিনে কী কারণে অমিতকে হত্যা করা হলো? বাইরের কোনো শক্তি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা? হত্যার জন্য কেন রিপন জেলখানার মত জায়গা বেছে নিল? হত্যায় ব্যবহৃত ইট কিভাবে সেলে আসলো ও কারা দিল? কার নির্দেশে এবং কেনই বা অমিতের কক্ষে রিপনকে আনা হলো?

তবে এসব প্রশ্নের উত্তরে রিপন শুধুমাত্র বলেছেন, ঘুমানোর জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরেই অমিতকে রাগের মাথায় ইট দিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন। তাই অন্য সব প্রশ্নের উত্তর পেতে মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে চান তদন্ত দল। রিপনের কথাই যে শেষ কথা সেটা না ধরে আরো নানা সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নিজের খুনের বাইরেও কারাগারের অনেক অনিয়ম ও অমিতের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন রিপন। এসব তথ্যও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে তদন্ত দলের পক্ষ থেকে।

জানতে চাইলে মামলার তদারক কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে রিমান্ডে এনে রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে রাগের মাথায় ইট দিয়ে অমিতকে খুন করেছে এটা বললেও অন্য সব প্রশ্ন এগিয়ে গেছে। তবে কারাগারের অনিয়ম নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছে। এছাড়া মামলা সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য পেলেও তা আমরা যাচাই বাছাই করছি।’

জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন
এদিকে অমিত মুহুরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত এক সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজকে অফিস আওয়ারের শেষের দিকে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তবে এখনো খুলে দেখিনি। দেখার পর সেটা সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই গণমাধ্যমকে জানানো হবে না।’

তবে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে কারাগারের ভেতর অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। এছাড়া অমিত হত্যার বিস্তারিত এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। কারাগারে শৃঙ্খলা ফেরাতে মন্ত্রণালয়ের কাছে নানা সুপারিশও করা হয়েছে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!