রিজেন্ট সাহেদ তিন দিন লুকিয়ে ছিলেন মহেশখালীর সাইক্লোন শেল্টারে

রিজেন্ট গ্রুপের আলোচিত সেই মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে একটি সাইক্লোন শেল্টারে লুকিয়ে ছিলেন টানা তিন দিন। করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি, ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় বহুল আলোচিত বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজেই স্বীকার করেছেন একথা।

কক্সাবাজারের মহেশখালী ছাড়াও তিন-চারটি জেলা ঘুরে পরিচিত কয়েকজনের সহায়তা নিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নিজের জেলা সাতক্ষীরায় গিয়েছিলেন। আত্মগোপনে থাকার সময় সাহেদ খুব দ্রুত স্থান পরিবর্তন করায় তার খোঁজ পেতেও রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে সাহেদ জানিয়েছেন, ঢাকা, কুমিল্লা ও সর্বশেষ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকার আগে তিনি কক্সবাজারে এসেও আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। এই স্থানগুলোর একটি থেকে আরেকটিতে গিয়েছেন কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে, কখনওবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে।

রিজেন্ট সাহেদ তিন দিন লুকিয়ে ছিলেন মহেশখালীর সাইক্লোন শেল্টারে 1

করোনা পরীক্ষায় রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি প্রকাশ পাওয়ার পরই সাহেদ আঁচ করতে পারেন— তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন। এ কারণে ৭ জুলাই রাতেই তিনি ঢাকা ছেড়ে যান। শুরুতেই নরসিংদীর মাধবদীতে তার এক কর্মচারীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন নরসিংদী শহরে দিনভর ঘোরাঘুরি করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন তিনি। ৮ জুলাই রাতেই আবার চলে যান কক্সবাজারের মহেশখালীতে।

রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের এক ভায়রার ভাই গিয়াসের গাড়িতে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যান সাহেদ। সেখান থেকে স্থানীয় দালালের সহায়তা নিয়ে চলে যান দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে। পূর্ব পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় সেখানকার একটি সাইক্লোন শেল্টারে আত্মগোপন করে কাটান টানা তিন দিন। তবে সাহেদ মহেশখালীর ঠিক কোন্ জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন সেটা প্রকাশ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় কর্মরত কোনো ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের সহায়তা নিয়েই সাইক্লোন শেল্টারে ঘাপটি মেরে ছিলেন। কিন্তু কী উদ্দেশ্য নিয়ে সাহেদ মহেশখালীর মতো জায়গায় গিয়েছিলেন, বঙ্গোপসাগর দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কিনা তা নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

তিন দিন পর মহেশখালী থেকে সাহেদ ভাড়া গাড়িতে করে কুমিল্লার মীরাবাজারে যান। পরে সেখান থেকে একটি বড় কোম্পানির ট্রাকে করে ঢাকায় ঢুকে মানিকগঞ্জের দিকে চলে যান। এরপর ১২ জুলাই ভাড়া করা একটি গাড়িতে করে চলে যান সাতক্ষীরায়।

সাতক্ষীরায় এক আত্মীয়ের বাসায় রাতের বেলা কাটিয়ে দিনের বেলা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে বাচ্চু মাঝির মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। সাতক্ষীরায় মাহবুব ওরফে ইমন ওরফে পটল নামে একজনের সহায়তা নিয়েই মূলত অবস্থান করছিলেন সাহেদ। ওই পটলই তাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করছিলেন।

র‌্যাব জানতে পেরেছে, এই সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়েই সাহেদ এর আগে একবার অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। সে কারণে এলাকাটি তার বেশ পরিচিত।

সাতক্ষীরা থাকাকালে নিজেকে ঢাকার জন্য সাহেদ চুলে কলপ ও গোফ ছোট করে ফেলেন। প্রায় নয় দিন পালিয়ে থাকার সময় রাতের বেলায় খুব একটা ঘুমাতেনও না। সেখানে পরিচিত বা আত্মীয়স্বজনরাও তাকে রাখতে চাইতেন না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!