রাত পোহালেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ

কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনাল

রাত পোহালেই (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টা) ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলযুদ্ধে মাতোয়ারা হবে ফুটবল বিশ্ব। যদিও চলছে ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধ। উপমহাদেশের সবগুলো দেশই খেলছে সে আসরে। তাই উত্তাপটা একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। নাহলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ নিয়ে চায়ের কাপ কিংবা আড্ডার মাঠে তর্ক ঝড় উঠবে না তা কি হয়! একযুগ পর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে লা আলবাসিলেস্তো ও সেলেকাওরা। কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় লড়বে মেসি ও দানি আলভেজরা।

সর্বশেষ ২০০৭ সালে কোপায় মুখোমুখি হয়েছিলো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সেবার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ওই আসরে ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা খেলছিল দারুণ। কিন্তু ফাইনালে হেরে হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলো মেসি-রিকুয়েলমেরা। দু’দলের শেষবার দেখা হওয়ার দুজন খেলোয়াড় এখনও টিকে আছেন। ব্রাজিলের দানি আলভেজ, আর্জেন্টিনার মেসি।

গ্রুপপর্বে বলিভিয়ার জালে ৩টি এবং পেরুর জালে ৫টি গোল দিয়ে সেরা হয়েই কোয়ার্টারের টিকিট নিশ্চিত করেছিলো। আর শেষ আটের লড়াইয়ে প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা ঝুঁকিতে থেকেও কলম্বিয়ার কাছে হেরে কাতারকে হারিয়ে এবং প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র করে দ্বিতীয় হয়ে তবেই ব্রাজিলের বিপক্ষে লড়ার সুযোগ পেয়েছেন মেসিরা।

ঘরের মাঠে খেলছে বলে ব্রাজিলকে অনেকে ফেভারিট মনে করলেও তা মানছেন না নিকোলাস ওতামেন্দি। তিনি বললেন, আর্জেন্টিনার এবারের বড় শক্তি তাদের সুশৃঙ্খল রক্ষণ। এটা দিয়েই ব্রাজিলকে চমকে দিতে চান এই ডিফেন্ডার, ‘আমরা সেমিফাইনালে এমন এক দলের বিপক্ষে খেলব, যে ম্যাচটা একটা ক্লাসিকো। আশা করি ফল আর্জেন্টিনার পক্ষেই যাবে।’

সেলেকাওদের হয়ে থিয়েগো সিলভা মনে করিয়ে দিলেন দু’দলের লড়াইয়ের কথা। তার ভাষায়, ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই তো আর প্রতিদিন হয় না। এটা কে জিতবে কে হারবে সেটা না দেখে আমরা লড়াইটা উপভোগ করার চেষ্টা করবো।’ আজ জিতলে ১২ বছর পর কোপার ফাইনালের পা রাখবে ব্রাজিল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার সামনে টানা তিনবার ওঠার সুযোগ এটা।

ব্রাজিলের সুরক্ষিত জাল ভেদ করতে পারবে আর্জেন্টিনা?

টুর্নামেন্টে কোন গোল হজম না করা একমাত্র দল ব্রাজিল। কোনো দলই এখন পর্যন্ত তাদের গোলবারের দুর্গ ভেদ করতে পারেনি। তাই এই বিষয়ে নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তা ভাজ পড়েছে আর্জেন্টিনার কপালে।

ব্রাজিলের তারকা ফরোয়ার্ড গেব্রিয়েল হেসুস তো এক প্রকার হুমকিই দিয়ে দিলেন আলবিসেলেস্তেদের। তার মতে, ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ভাঙতে প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডদের।

হেসুস বলেন, ‘ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ভাঙাটা খুব কঠিন হবে। প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে আর্জেন্টিনাকে। কেননা অনেক সময়ই ধরেই আমরা কোনো গোল হজম করিনি। তাদের বিপক্ষে শক্ত ডিফেন্স রাখতে হবে এবং তাদেরকে হারাতে আমাদেরও অনেক ভালো পারফরমেন্স করতে হবে।’

সমর্থকদের ছাড়াও সুপার ক্লাসিকোর এই উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই দলের খেলোয়াড়ারের মধ্যে। তা স্বীকার করলেন হেসুস এবং ঘরের মাঠে এই ম্যাচ হওয়া ব্রাজিল বাড়তি চাপে থাকবে বলে মনে করেন এই ফরোয়ার্ড।

হেসুস বলেন, ‘এই দুই দেশের লড়াইয়ের অনেক ইতিহাস আছে। আমরা ঘরের মাঠে খেলছি এবং জয়ের জন্য আমরাই বেশি চাপে থাকব। আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলাটা এতো সহজ হবে না। তারা অবশ্যই আমাদেরকে আক্রমণ করবে।’ বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় হলেও লিওনেল মেসিকেই বর্তমানে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হিসেবে মনে করেন হেসুস। এছাড়াও সার্জিও আগুয়েরোকে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি।

দুই দলে থাকবেন যারা

রাত পোহালেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ 1
এই একাদশ নিয়েই মাঠে নামতে পারে ব্রাজিল।

দুই দলের হয়ে কে খেলবেন, আর কে খেলবেন না, এই নিয়ে দুই কোচ এর মধ্যেই পরিকল্পনা করা শুরু করে দিয়েছেন। কেমন হবে আগামীকাল দুই দলের একাদশ? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

ম্যাচ শুরুর আগে এর মধ্যেই কিছু সুখবর পেয়ে গেছে ব্রাজিল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই ম্যাচেই ফিরছেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো। গ্রুপ পর্বে দুটি হলুদ কার্ড দেখার মাশুল হিসেবে কোয়ার্টারে প্যারাগুয়ের সঙ্গে খেলতে পারেননি কাসেমিরো। তাঁর জায়গায় খেলেছিলেন নাপোলির অ্যালান। ওদিকে মাম্পসের কারণে কোয়ার্টারে না খেলা উইঙ্গার রিচার্লিসনও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মূল একাদশে না থাকলেও বিকল্প খেলোয়াড়ের তালিকায় অবশ্যই রাখা হবে তাঁকে। তবে ডান হাঁটুর ব্যথাটা এখনো ভোগাচ্ছে লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে। ব্রাজিল কোচ তিতে শেষ মুহূর্ত অপেক্ষা করবেন লুইসের ফিট হওয়ার জন্য, লুইস পুরোপুরি সুস্থ না হলে অ্যালেক্স সান্দ্রোকে নামানো হবে লেফটব্যাক হিসেবে। গোলবারে যথারীতি থাকবেন লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী গোলরক্ষক অ্যালিসন। রাইটব্যাকে অধিনায়ক দানি আলভেসের জায়গা পাকা। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে জুটি বাঁধবেন পিএসজির জোড়া ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা ও মার্কিনহোস। ৪-২-৩-১ ছকে মিডফিল্ডে কাসেমিরোর সঙ্গী হবেন বার্সেলোনার আর্থার মেলো। এই দুজনের সামনে দুই উইঙ্গার ও একজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন যথাক্রমে গ্রেমিওতে খেলা উইঙ্গার এভারটন, ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও বার্সেলোনার ফিলিপ কুতিনহো। সবার সামনে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো।

রাত পোহালেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ 2
আর্জেন্টিনার মূল একাদশ অনেকটাই এ রকম হবে।
ওদিকে প্রতি ম্যাচের এক দিন আগেই নিজের মূল একাদশ বলে দেওয়া আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি কোয়ার্টারের মতো সেমিতেও মূল একাদশ ফাঁস করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আগেভাগে মূল একাদশ বলে দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ কোচ নিজের পরিকল্পনা সাজানোর এন্তার সময়-সুযোগ পান। যে কারণে কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে ও কাতারের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে ভুগেছেন মেসিরা। তবে এটা নিশ্চিত করেছেন, মূল একাদশে মেসি-আগুয়েরো অবশ্যই থাকছেন। আর্জেন্টিনার পত্রপত্রিকার খবর মানলে, গোলবারের নিচে যথারীতি থাকছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। আরমানির সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বাঁধবেন ম্যানচেস্টার সিটির নিকোলাস ওটামেন্ডি ও ফিওরেন্টিনার জার্মান পেজ্জেলা। রাইটব্যাকে খেলবেন টটেনহামের হুয়ান ফয়থ ও লেফটব্যাকে যথারীতি আয়াক্সের নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। মিডফিল্ডে কোন চারজন খেলবেন, সে নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গত ম্যাচে পিএসজির লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে পেছনে রেখে সামনে খেলেছিলেন স্পোর্টিং লিসবনের মার্কাস আকুনিয়া ও উদিনেসের রদ্রিগো ডি পল। দুজনই মূলত উইঙ্গার, তাও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেছেন। এখন তাদের ওপরেই কি স্কালোনি ভরসা রাখবেন? নাকি ভেনেজুয়েলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে গিদো রদ্রিগেজ আর জিওভান্নি ল সেলসোর মতো মিডফিল্ডারকে খেলাবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওপরে আক্রমণভাগে মেসি-আগুয়েরোর সঙ্গী হবেন গত ম্যাচে গোল করা লওতারো মার্টিনেজ, এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য ঘুমজড়ানো চোখে আগামীকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দেখতেই হচ্ছে!

অনলাইনে সরাসরি দেখুন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমির লড়াই

কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে এবার মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। দুই দলের এই দ্রুপদি লড়াইটি আবার বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা সরাসরি টিভিতে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ, বাংলাদেশে প্রচারিত স্পোর্টস চ্যানেলগুলোর কোনোটিতেই দেখা যাচ্ছে না এবারের কোপা আমেরিকার খেলা।

লাতিন আমেরিকার জমজমাট এই লড়াইয়ের খেলাগুলো দেখানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক স্পোর্টস চ্যানেল বেইন স্পোর্টসে। এছাড়া পিপিটিভি নামক একটি চ্যানেলেও সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে কোপা আমেরিকার ম্যাচ।

তবে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা অনলাইনে বসে সরাসরি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচটি দেখতে পারবেন। কারণ, বেইন স্পোর্টসের সার্ভার ব্যবহার করে অনলাইনে সরাসরি ফুটবলের এই দ্বৈরথটি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহারকারীরাও অ্যাপস ব্যবহার করে দেখতে পারবেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ। এমনকি রয়েছে অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং।

tv.bdixsports.com এই লিংকে প্রবেশ করলে পাওয়া যাবে দেশি-বিদেশি চ্যানেলগুলো তালিকা। সেখানে তিন নম্বর সারিতে রয়েছে ফুটবল চ্যানেল। তার শুরুতেই দেখা যাবে বেইন স্পোর্টস। এই চ্যানেলের ৩, ৪, ৬ এবং ১০- এই চারটি চ্যানেলেই দেখা যাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ। মোট চারটি ভাষা- ইংলিশ, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং আরবিতে সম্প্রচার করা হবে এই ম্যাচটি। সার্ভার থেকেই অনলাইনে সরাসরি ম্যাচ সম্প্রচার করবে টিভি চ্যানেলটি।

navixsport.en.softonic.com এই লিংকটিতে পাওয়া যাবে মোবাইল অ্যাপস। যেটা ডাউনলোড করে মোবাইলেও দেখা যাবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ।

bdtv.live এই লিংকে প্রবেশ করলে অনলাইনে সরাসরি কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে। এছাড়া totalsportek.com এই লিংকেও লাইভ স্ট্রিমিং দেখা যাবে কোপা আমেরিকা সেমিফাইনালের।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!