রাতে সাতকানিয়ায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে গুলি, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

অভিযোগের তীর সেই মিন্টু কামাল বাহিনীর বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির বাড়িতেও একইভাবে গুলি করে তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল।

সর্বশেষ শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামে যুবলীগ নেতা শাকিল আহমেদের বাড়িতে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। তিনি সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪টি গুলির খোসা, স্প্রিন্টার ও জানালার ভাঙা কাঁচ উদ্ধার করেছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যুবলীগ নেতা শাকিল আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি এসেছি নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের কাজ দেখাশোনা করার জন্য। শনিবার সকালে শহরে চলে যাওয়ার কথা। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমিয়ে পড়ি ১১টার দিকে। রাত সাড়ে ১২টায় বিকট শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে পাশের রুমে মায়ের চিৎকার শুনতে পাই। ছুটে গিয়ে দেখি জানার কাঁচ ভাঙা। ঘটনার আকস্মিকতা বুঝে উঠতে না পেরে ভয় পেয়ে যাই। বিষয়টি সাথে সাথে সাতকানিয়া থানার ওসিকে ফোন করে অবহিত করি। কিছুক্ষণ পর ঢেমশা তদন্তকেন্দ্র থেকে পুলিশ এসে বাড়ির বাইরে থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কিছু প্রভাবশালী নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে। আমরা সচেতন অনেকেই তাদের এসব অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছিল। তারাই মূলত এই হামলা করতে পারে বলে আমি সন্দেহ করছি। এ পরিস্থিতিতে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

শাকিল আরও বলেন, ‘এ ঘটনা পরিকল্পিত। যা ঘটনার ধরন দেখে বুঝা যায়। আমি সাধারণত গ্রামের বাড়িতে থাকি না। এসে দুয়েকদিন থেকে স্কুল ভবনের কাজ তদারকি করে শহরে চলে যাই। হামলাকারীরা আমি বাড়িতে আছি নিশ্চিত হয়েই এ হামলা করতে পারে। আমি ওই রুমে থাকি ভেবেই তারা আমার মায়ের রুমে গুলি করেছে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রবাসী ফখরুদ্দিন মিন্টুর নির্দেশে কামাল উদ্দিনের পরিকল্পনায় তাদের অনুসারী শিবির ক্যাডার জামশেদ, কানা মনজুর, ডাকাত ফাহিম, মৌলভী জোবায়ের, কালো জাবেদরা আমার বাড়িতে গুলিবর্ষণ করতে পারে।’

ঢেমশা তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মোহাম্মদ ওমর জানান, ‘আমরা খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গেছি। গুলিতে ঘরের দুটি জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হলো খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। বাড়ির পূর্ব পাশ থেকে চারটি গুলির তাজা খোসা, বেশ কিছু স্প্রিন্টার ও কাঁচের টুকরো আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে।’

এর আগে গত ১৩ আগস্ট রাতে নলুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের বাড়িতে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় অতর্কিত হামলা করা হয় মহিউদ্দিনের ওপর। ওই হামলা মহিউদ্দিনের হাত ও পা ভেঙে দেওয়া হয়। গুরুতর আঘাত করা হয় মাথায়। মৃত ভেবে ফেলে যাওয়া মহিউদ্দিনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আশশেফা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মহিউদ্দিন এখনো হাঁটাচলা করতে পারেছে না। চিকিৎসকরা বলেছেন তার আঘাত গুরুতর। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। এ ঘটনায় ৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। প্রধান আসামি মোরশেদ আলম এখনো জেলহাজতে, ৩ নম্বর আসামি টাইগার ফারুক দুবাই পলাতক রয়েছে। ২ নম্বর আসামী শিবির ক্যাডার জামশেদসহ অন্যান্য আসামিরা বাইরে আছে। তাদের মাঝেমধ্যে এলাকায় দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, মিন্টু কামাল বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তাদের দলে রয়েছে কিছু বখাটে যুবক ও কিশোর। তাদের রয়েছে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য তারা পুরো এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!