রাতে মেশায় বিষ, ভোরে ভেসে ওঠে মরা মাছের ঝাঁক

সাঙ্গুর বিষাক্ত মাছ চলে আসছে খোলাবাজারে

সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে প্রবাহিত সাঙ্গু নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে একটি চক্র। চক্রটির এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের কারণে নদীর মৎস্যভাণ্ডার ধ্বংস হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একমাস ধরে সাঙ্গু নদীর বান্দরবান অংশ, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার শীলঘাটা এবং ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে বেআইনিভাবে মাছ নিধন করছে চক্রটি।

শীত মৌসুম শুরুর আগে ও পরে সাঙ্গু নদীর পানি কমে গেলে এই চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। চক্রটি গভীর রাতে নদীর উজানের অংশে বিষ প্রয়োগ করার কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাটির অংশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভোরে নদীতে ভেসে উঠে। এভাবে মণে মণে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে। বিষে মারা এসব মাছ খেতে বাধ্য হচ্ছে এলাকাবাসী।

প্রসঙ্গত, সাঙ্গু নদীর বান্দরবান এবং সাতকানিয়া অংশে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন চলছে গত কয়েক বছর ধরে। যে কারণে নদীর মৎস্যভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেঁচে থাকা মাছের বংশ বিস্তারও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। একসময় এ নদীতে শত শত জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে মাছের আকাল শুরু হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে মাছ শিকার বন্ধ করে দিয়েছে।

লাখ লাখ মানুষের আর্শীবাদ সাঙ্গু নদীর মিঠাপানিতে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদ হয়ে আসলেও বর্তমানে মানবসৃষ্ট নানা অপকর্মে সাঙ্গু অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। সাঙ্গু হরেক প্রজাতির মিঠা পানির মাছ বিচরণের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘তারা এতো মাছ তুলছে কেমন করে। কিছুদিন আগে দেখেছি ৮ মণ মাছ ধরা হয়েছে। মাছের ছড়াছড়ি চলছে। নদীতে যারা বড় জাল বসায় তাদের আইনের আওতায় আনলে অবশ্যই মূল অপরাধীরা বেরিয়ে আসবে। কারণ এরা সিন্ডিকেট করে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে।’

তাপস বড়ুয়া নামে স্থানীয় এক যুবক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতের আঁধারে বিষ প্রয়োগের পর ভোরের আলো ফুটতেই মাছ ধরতে নামে চক্রটি। প্রতিবছর শীত মৌসুম শুরুর আগে ও পরে নদীর পানি কমে গেলে একটি চক্র নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন শুরু করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।’

তিনি বলেন, গত অক্টোবর শেষে নদীর বান্দরবান অংশ, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার শীলঘাটা এবং ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে বেআইনিভাবে মাছ নিধন করছে। ভোরের আলো ফুটতেই বিষে আক্রান্ত হয়ে নদীতে ভেসে উঠে মরা মাছ এবং তা বিক্রি করা হয় আশেপাশের বাজারে।

রাতে মেশায় বিষ, ভোরে ভেসে ওঠে মরা মাছের ঝাঁক 1

নদী রক্ষায় বিষ প্রয়োগকারীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার। তারপরও আইনের ফাঁকফোকরে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে নদীতে বিষ প্রয়োগকারী চক্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশ মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কারো নামে অভিযোগ নেই। যে কারণে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েও তেমন কোনো সুরাহা করতে পারছি না। কারণ চক্রটি বান্দরবান ও সাতকানিয়া অংশে সাঙ্গু নদীতে বিষ প্রয়োগ করছে গভীর রাতে। আমরা চেষ্টা করছি চক্রটিকে ধরার।’

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেশব চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। মৎস্য অধিদপ্তর যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, সহযোগিতা করবো।’

সাতকানিয়া অংশে বিষপ্রয়োগ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত শর্মা বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। তারপরও সাবেক কর্মকর্তার কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। আসলে সাতকানিয়া অংশের নদীতে বিষ প্রয়োগ হয় না। বান্দরবানের দিকের নদীতে হয়ে থাকে। এলাকাবাসী আমাদের অভিযোগ করেছে। তাও আমি সরেজমিনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবো।’

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ আসে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সাতকানিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর পুরানগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুব সিকদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তাদের ধরার করার চেষ্টা করছি। যারা দুই বছর ধরে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে। সবাই মিলে কাজ করলে চক্রটিকে ধরা সম্ভব।’

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!