রাতের রেলস্টেশনে বিনা টিকিটে যাত্রী তোলার বাণিজ্যে আরএনবি ও জিআরপি পুলিশ

তুর্ণা নিশীথা-উদয়ন-ঢাকা মেইল-মেঘনা সব ট্রেনেই একই কাণ্ড

রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত। ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা পার করেছে। লাকসাম রেলস্টেশনে টিকিট না পেয়ে কিছু যাত্রী করছেন ছুটোছুটি। ‘লাটসাহেব’ সেজে তাদের সামনে সামনে ধীর পায়ে হাঁটছে তখন আরএনবি আর জিআরপি পুলিশের কয়েকজন সদস্য।

অসহায় যাত্রীদের কেউ একজন এসে কুলাউড়ার টিকিটের খোঁজ চাইলো তাদের একজনের কাছে। ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে খাকি পোশাকের আরএনবি সদস্যের জবাব, ‘টিকিট ছাড়াই সিটে বসে যাবেন। একদাম জনপ্রতি ২৫০ টাকা।’ মিনতি করে ওই যাত্রী দুই জন ৪০০ টাকায় যাওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। এতে কোনো জবাবই আসলো না কম দাম শুনে বিরক্তির ছাপ ওঠা আরএনবি সদস্যের মুখ থেকে।

যেখানে স্টেশনের কাউন্টার দূরের কথা, অনলাইনেও টিকিট মিলছে না সেখানে বিনা টিকিটে যাত্রীদের সিটে বসিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে আরএনবি ও জিআরপি পুলিশ। তবে এই অনিয়মটি ঘটছে কেবল রাতের ট্রেনেই।

বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে একটি ভিডিও এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে।

জানা গেছে, কৌশল পাল্টে রাতের ট্রেনে বিনা টিকেটে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও জিআরপি পুলিশ সদস্যরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১৭ মিনিটে লাকসাম স্টেশনে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের বিনাটিকিটে যাত্রীদের প্লাটফর্মের পাশে একটি দোকানের সামনে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে জিআরপির এক কনস্টেবল।

কুমিল্লা স্টেশনে যাওয়ার জন্য জুয়েল নামে এক যাত্রী টিকেট না পেয়ে এক আরএনবি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই আরএনবি সদস্য বলেন, ‘১৫০ টাকা দিলে ওঠা যাবে ট্রেনে। যাওয়া যাবে সিটে বসেই।’ পরে ওই যাত্রী উদয়ন এক্সপ্রেসে কুমিল্লায় যেতে ১৫০ টাকা গুঁজে দেন তার হাতে।

অন্যদিকে আরএনবির আরেক সদস্য আখাউড়া স্টেশনে এক যাত্রীকে পাঠাতে চুক্তি করেন ২৫০ টাকায়।

অভিযোগ উঠেছে, তুর্ণা-নিশীথা, উদয়ন, ঢাকা মেইল, মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন টিকেটবিহীন যাত্রী বহন করছে রেলওয়ের সেবায় নিয়োজিত আরএনবি ও জিআরপি পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাকসাম স্টেশনে কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, ‘জিআরপি ও আরএনবি সদস্যরা বিনা টিকিটে যাত্রী বহনের সাথে জড়িত। তাদের এ বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।’

একটি ভিডিওতে এক যাত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, কাউন্টার থেকেই চলে নয়-ছয়। অনলাইনে টিকিট কেটেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেন এই যাত্রী। লাকসাম থেকে সিলেট শায়েস্তাগঞ্জের টিকিটের মূল্য ১৪৫ টাকা হলেও কাউন্টার থেকে নেওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি টিকিট। টিকেট শেষ হতেই জিআরপি ও আরএনবি সদস্যদের আনাগোনা বেড়ে যায় টিকিট কাউন্টার এলাকায়।

এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর ইয়াছিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জিআরপি পুলিশ লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

লাকসাম স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিটি ট্রেনের জন্য অর্থাৎ যে কয়টি ট্রেন স্টেশনে থামে তার বিপরীতে চার থেকে পাঁচটি সিট বরাদ্দ রয়েছে। এই টিকিটগুলোই কেবল বিক্রি হয়ে থাকে। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই।’

জেএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!