রাঙ্গুনিয়ায় ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্ক, প্রশাসন বলছে গুজব

‘‌ঘুমিয়ে পড়ো, তা না হলে ‌‘ছেলে ধরা’ এসে নিয়ে যাবে’ এক সময় এমন কথা বলে ভয় দেখিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়াতো মায়েরা। কিন্তু মায়ের সেই ভয় দেখানো উক্তিটি এখন ভয় দেখানো মা-বাবাদের চোখে-মুখে ভর করছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাজুড়ে এখন বিরাজ করেছে ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্ক। এতে বিদ্যালয়গামী সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। বন্ধ হয়ে গেছে শিশুদের স্বাভাবিক চলাফেরাও। যদিও এটিকে গুজব বলছেন উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে ‘পদ্মা সেতু তৈরি করতে এক লাখ শিশুর মাথা লাগবে। কাজেই আপনার বাচ্চাকে ঘর থেকে বের হতে দিবেন না। স্কুল, মাদ্রাসা, খেলার মাঠ কোথাও না। আর আপনি মুসলমান হলে মেসেজটি আরও ১০ জনের কাছে পাঠিয়ে দিন।’ এমন বিচিত্র কিছু ক্ষুদে বার্তা কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মানুষের মুঠোফোনে আসছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ছেলে ধরা গুজব।

ছেলে ধরা চক্র এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শিশুদের অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সর্বত্র। অদ্ভূদ এই সংবাদে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের শিশু ও অভিভাবকরা। ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্কে গ্রামের শিশুরা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। অনেক অপরিচিত লোক দেখলেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনা অনুসন্ধান করতে গেলে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সত্যতা মিলছে না।

উপজেলার লালাানগর ইউনিয়নের নাথ পাড়া গ্রামের স্বপন নাথ বলেন, ‘শুনেছি পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে এক লাখ শিশুর মাথা লাগবে। তাই অপহরণকারীরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সুযোগ বুঝে শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’

চলমান এই ছেলে ধরা আতঙ্ক নিয়ে কথা হয় পারভীন আকতার নামক এক গৃহবধূর সঙ্গে। তার ছয় বছরের মেয়ে মীম পড়েন পাশের একটি কিন্ডার গার্টেনে। তবে গত কয়েকদিন যাবত ছেলে ধরার কথা শোনে ভয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।

আতঙ্কিত এই গৃহবধূ বলেন, ‘কি করব ভাই বলতে পারছি না। সব জায়গায় নাকি ছেলে ধরা নেমেছে। বাচ্চাদের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাই মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছি না।’

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহসানুল ভূঁইয়া বলেন, ‘ছেলে ধরার কোনো সত্যতা নেই। উপজেলার কোথাও এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। অসাধু কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা বলে গুজব চালাচ্ছে। এতে কোন রকম আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।’

ছেলে ধরা আতঙ্ক নিয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন , ‘আমরা এখন পর্যন্ত ছেলে ধরার কোনো সত্যতা পায়নি। ছেলে ধরা নিয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আসলেই ছেলে ধরা বলতে কিছু নেই। সম্পূর্ণ গুজব এটি। তবে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!