রাঙ্গুনিয়ায় আবারও মেয়র হলেন শাহজাহান সিকদার

সংঘর্ষ, মারামারি ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) একটানা ভোট গ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের উপস্থিতি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন ভোটাররা।

অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

এদিকে, বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৪ হাজার ৮০৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান সিকদার।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক মো. হেলাল উদ্দিন শাহ পেয়েছেন ২৮৯ ভোট। এছাড়া নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জালাল উদ্দিন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে নুরুল আবছার জসিম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জসিম উদ্দিন শাহ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল কাশেম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অলি আহাম্মদ মাস্টার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তারেকুল ইসলাম চৌধুরী, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কপিল উদ্দিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওমর ফারুক।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে ৩৫ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৮ জন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন।

বিএনপির ভোট বর্জন:
নির্বাচনী এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে দুপুর আড়াইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করে ভোট বর্জন করেন বিএনপির প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিন শাহ।

হেলাল উদ্দিন শাহ বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে প্রত্যেক কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। বার বার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন সহযোগিতা না করার কারণ ও পুনর্নির্বাচন দাবি করে আমি এই ভোট বর্জন করছি।

তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহজাহান সিকদার বলেন, ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। পরাজয় বুঝতে পেরে বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

সংঘর্ষ গোলাগুলি :
পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টার দিকে ১ নম্বর কেন্দ্র উত্তর নোয়াগাঁও সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী এহসান ও জালাল উদ্দিনের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ ১২ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থী এহসান (৩০) ও পুলিশের এএস আই মুনির (৩৪), মোহাম্মদ বাদশা (২৬) ও মোহাম্মদ সোহেলকে (৩১) উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা গুরুতর হলে বাদশা ও সোহেলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, একটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারই প্রথম ইভিএম মেশিনে ভোট দিয়েছেন পৌরসভার ভোটাররা। তবে বিএনপি প্রার্থী কেন নির্বাচন বর্জন করছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন।

উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১১টি কেন্দ্রের ৭০টি বুথে মোট ভোটার ছিল ২৫ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫১৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১২ হাজার ২৭২ জন। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‍্যাবসহ একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!