রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ 1চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙ্গামাটি : এবার রাঙ্গামাটিতে অনিয়মের অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ এনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন জানিয়ে সোমবার জেলা যুগ্ম জজ আজিজুল হকের আদালতে মামলাটি করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু। মামলার বিবাদীরা হলেন- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীদ্বয়কে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। যাতে নোটিসপ্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে আদালতের কাছে যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। মামলার বাদী ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যমান শূন্য পদ পূরণে চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ৭৭ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা। এতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়েছে ৫০৩ জনকে। পরে এদের মধ্যে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিলাইছড়ি উপজেলার ৫৯ নম্বর রোলধারী প্রার্থীকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অমান্য ছাড়াও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঘুষ, দলীয় ও আত্মীয়করণে স্বজনপ্রীতির জন্য বিস্তর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ৭৭ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা- যা শেষ হবে বৃহস্পতিবার। মঙ্গলবার মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার প্রার্থীদের। আজ নেয়া হবে বরকল, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলার প্রার্থীদের এবং বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে সদর, কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ এনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির প্রার্থনায় জেলা যুগ্ম জজ আদালতে করা মামলার (সিভিল স্যুট ৫০৪/১৭, তারিখ-১৮/০৯/১৭) আরজিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু বলেন, ২০০০ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে জারি করা আদেশে যে কোনো সরকারি চাকরির নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করা হয়। যাতে বলা হয়েছে, কোনো জেলায় নির্দিষ্ট কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই জেলার শূন্য পদ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্য জেলার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এমনকি বিভাগীয় পর্যায়ে কোটা পূরণ সম্ভব না হলে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কোটা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অজুহাতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট ৩০ শতাংশ চাকরির কোটা অন্য প্রার্থীকে দিয়ে পূরণ করা যাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ দেশের অন্য সব জেলায় পালন করা হলেও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের এবার ৭৭ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তা অমান্য করা হয়েছে।
আরজিতে আরও বলা হয়, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ প্রতিপালনে বাত্যয় ঘটার আশঙ্কায় ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে আইনগত বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে একই সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের পক্ষে দেয়া জবাবে আইনজীবী জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা স্বীকার করে জেলা পরিষদের নিয়োগে তা সংরক্ষণের জন্য নিশ্চয়তা দেয়া হয়। কিন্তু তাও রক্ষা করা হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রর্বাট রোনাল্ড পিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ যত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সেখানে ১৪৫ পদে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট কোটা পূরণ করা হয়নি। আমরা বার বার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা পূরণ করার কথা বলে আসছি। কিন্তু এ জেলা পরিষদ তাতে কোনো কর্ণপাত-ই করছে না। কোটা থাকলেও উপজেলাওয়ারি ভাগাভাগির নিয়োগ দেয়ায় অনেক উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা রাখা হয়নি। এবার নিয়োগে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোনো কোটা-ই রাখা হয়নি।
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, মামলার বিষয়ে বাদীর বক্তব্য শোনার পর তা পর্যালোচনা করে সার্বিক পর্যালোচনায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদীর প্রার্থনা মতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করা হবে না মর্মে নোটিসপ্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দেন আদালত।
এসব বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকালে সাড়ে ৩টা হতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকাল সাড়ে ৫টা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার ব্যবহার করা মুঠো ফোনের বারবার কল দিয়েও নম্বর দুটি-ই বন্ধ পাওয়া যায়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রওশন আলীর মুঠোফোনে পুনারায় যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা জেলা পরিষদেও শিক্ষক নিয়োগে তা সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যদি প্রাথী পাওয়া না যায় তাহলে পরবর্তীতে জেলা পরিষদের মিটিং করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোটা পুরুন করা হবে ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!