রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল ভবনে হঠাৎ ফাটল দেখা দিয়েছে।। ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন দ্বিতল ভবনের উপর নির্মিত হচ্ছে বর্ধিত তৃতীয় তলা। ফলে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে লোকজন। দূর্ঘটনার আশংকায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে ঝুঁকির মধ্যে পড়া রোগীদের ।
জেলা পরিষদের নিবার্হী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ প্রতিবেদককে বলেন, কোন ধরণের নকশা অনুমোদন ছাড়া গণপুর্ত বিভাগের নির্মিত দ্বিতল ভবনে তৃতীয় তলা নিমার্ণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিল না। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিশেষ বরাদ্ধে এ কাজ করা হচ্ছে । কত টাকা বরাদ্ধ তা আমি জানি না ।
রাঙ্গামাটি পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ জানান, নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ অনুসরণ না করে এ ভবনের কাজ করা হচ্ছে ।
জানা যায়, আশির দশকের দিকে নির্মিত ৫০ শয্যার রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল ভবনটি দ্বিতলবিশিষ্ট করে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ১৯৮৩ সালে। এরপর আর ভবনটির কোনো সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। এর মধ্যে ২০০৫ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির আর্থ-কোয়াক রিস্ক রিডাকশন প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত এক জরিপে এ জেনারেল হাসপাতাল ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই সালে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে রাঙ্গামাটি পৌরসভা। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের উপর জেলা পরিষদ কীভাবে নতুন তৃতীয় তলা নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছে, তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডটি ফাঁকা পড়ে আছে। রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে পাশের পুরুষ ও সংক্রমিত রোগীর ওয়ার্ডে। এমন পরিস্থিতিতে আতংক ছড়িয়েছে রোগী ও স্বজনসহ সাধারনের মাঝে।
রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. স্নে কান্তি চাকমা বলেন, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য এবং ভবনটির জরুরি কিছু সংস্কার কাজের প্রয়োজনে রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গত শনিবার হাসপাতালের ভবনটিতে ফাটল দেখা গেলে সবার মাঝে হৈ-চৈ শুরু হয় । চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে দ্রুত ডিপুটি সিভিল সার্জন তার কার্য্যলয়ে বৈঠক করেন । ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের ঠিক নিচে বিম ও আস্তরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে খবর শুনে দ্রুত ছুটে যান সিভিল সার্জন ডা. সেন্হ কান্তি চাকমা ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
এ সময় দুর্ঘটনার আশংকায় তাৎক্ষণিক ওয়ার্ডটিতে থাকা প্রায় অর্ধ-শতাধিক রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে পাশের ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান বলেন, শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের উপর তৃতীয় তলা নির্মাণের কারণে ওই অংশের নিচে ফাটল দেখা দেয়। এ কারণে জরুরি সভা করে প্রকৌশলীদের পরামর্শে রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মংক্যচিং মারমা সাগর বলেন, ২৫ জানুয়ারি থেকে হাসপাতাল ভবনটির বিম ও আস্তরে ফাটল দেখা দেয়। এতে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার আশংকায় শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের রোগীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
প্রকৌশলীদের মতে, হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলায় অপরিকল্পিতভারে আরেক তলা নির্মাণের ফলে অতিরিক্ত চাপের ভারসাম্য হারিয়ে এ ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া হাসাপাতালের দ্বিতল ভবনটিকে ২০০৫ সালে ঝুকিঁপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাঙ্গামাটি পৌরসভা। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ গত বছরের মাঝামাঝি হাসপাতাল সম্প্রসারণ করতে ভবনের তৃতীয় তলায় অপরিকল্পিতভারে ভবন নির্মাণ কাজ হাতে নেয়। বর্তমানে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই অতিরিক্ত চাপে ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতাল ভবনে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।