রাঙ্গামাটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙ্গামাটি :
বরাবরের মতোই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের একটি জনবল নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে আবারও ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। আগেও প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি নিয়োগে ঘুষ নিয়ে ওঠে ব্যাপক বানিজ্যের অভিযোগ। ঘুষ ছাড়াও পাওয়া গেছে আত্মীয় ও দলীয়করণের অভিযোগ। এবার নিয়োগ আয়োজন করা হয়েছে পরিষদের অধীন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে।

i_image_1440643677

এর তিনটি পদের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ১৭ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফার্মা) ৭ জন এবং মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) ২ জন। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আহবান করা হয় ২৪ জুলাই। এসব পদে নিয়োগের জন্য কোটি টাকার অধিক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. মুছা মাতব্বরসহ কয়েক জন সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাকর্মীর নাম উঠে আসছে। নিয়োগে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। তথ্য মতে, জেলা পরিষদের কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তা এতে জড়িত।

 

তবে জেলা সিভিল সার্জন স্নেহ কান্তি চাকমার স্বাক্ষরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হলেও এক্ষেত্রে তিনি ঢাল, তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দার বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ঘুষের প্রভাবে সুষ্ঠু নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকার কথা ব্যক্ত করেছেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া অসহায়, সাধারণ ও মোধাবি প্রার্থীরা।

 

এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের রিজার্ভবাজারের আব্দুল আলী একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরীক্ষা। এতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের ১৭ পদের বিপরীতে ৪১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফার্মা) ৭ পদের বিপরীতে ৪৮ জন এবং মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট’এর (ল্যাব) ২ পদের বিপরীতে ৩৯ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রার্থী অনেকে অভিযোগ করে জানান, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার পদে ৬-৭ লাখ এবং মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফার্মা) ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট  (ল্যাব) পদে ৪-৫ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে।
তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চাকরি হবে যারা টাকা দিয়েছে, চেয়ারম্যান সদস্যের আত্মীয় এবং ক্ষমতাসীন দলীয় লোক তাদের। আর তাদের তালিকা আগেই চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। অন্যরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে নামেই। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় লোক দেখানোর জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে তার দ্বিগুন উত্তীর্ণের সংখ্যা প্রকাশ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে জনতা শেখর চাকমা নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার শর্তে একাধিক জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগও উঠে আসে। তবে অভিযোগ যাচাইয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিষয়টির মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হচ্ছে বলে দাবি করে বলেন, লিখিত পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতেই ফল প্রকাশ করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তর্ণদের কাছ থেকে শনিবার মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
সিভিল সার্জন ডা.স্নেহ কান্তি চাকমা বলেন, আমার যেটা দায়িত্ব সেটা যতটুকু সম্ভব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করছি। আমার অগোচরে কেউ ঘুষ নিলে বা কোনো অনিয়ম হেেল আমার কিছুই করার নেই। তাছাড়া এর সবকিছুর ক্ষমতা জেলা পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যানের।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!