রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল যেন গরুর খামার!

ভর দুপুরের তপ্ত রোদ। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস, জেনারেল হাসপাতারের জরুরি বিভাগ আর সংক্রামক বিভাগের মাঝের ফাঁকা রাস্তা দখলে নিয়ে ছায়ায় পাঁচটি গরু শুয়ে আছে। একটির সামনের দু’পায়ে দগদগে ঘা। আরও বেশ কয়েকটি ঘুরে বেড়াচ্ছে অদূরেই। সংক্রামক বিভাগের পেছনে পোড়ানো ও ছড়িয়ে থাকা মেডিকেল বর্জ্য থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। গরুর ভয়ে নিরাপদ দুরত্ব দিয়ে মেডিকেলের শিক্ষার্থী আর নার্স-আয়ারা এসব বর্জ্য মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন। জরুরি বিভাগ থেকে ভেসে আসছে রোগীর গোঙানির শব্দ। রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় হাসপাতালের বাইরের চিত্রটি ছিল এমনই।

অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকা সাজিয়া বেগম (৫০) নিজের দুটি গরু বিশ্রাম নিতে দেখে স্বস্তিতেই ঘরে ফিরতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গরুর ছবি তুলতে দেখে কৌতুহলী প্রশ্ন তার ‘ছবি তুলেন ক্যা?।’ সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বললেন, ‘আমার তো খালি দুইডা, আরও ৫০/৬০টা গরু চড়ে এইহানে।’

সাজিয়া বেগমের কথায় বিস্ময় বাড়ে। জানালেন অন্তত ১০ জন গরু পালন করছেন হাসপাতাল চত্বরে। প্রয়োজন হলেই বাঁধেন; নইলে ছাড়াই থাকে এসব গরু। এমনকি ওয়ার্ডবয় বিষু চক্রবর্তী নিজেই পালন করছেন বেশ কটি গরু। ফলে হাসপাতালটি যেন গরুর খামার হয়ে ওঠেছে। রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বললেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও গরু বন্ধ করা যাচ্ছে না। এবার ব্যবস্থা নিতে পৌর মেয়রকে জানাবো।’

গরুর পালের অত্যাচারে সেবা নিতে আসা লোকজন, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমত নাকাল। বেশ ক’বছর ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরুর মালিকের সংখ্যাও। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জোড়ালো কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজির দেখেননি স্থানীয়রা। এরই মধ্যে শনিবার হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় কুকুর ঘুরে বেড়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ‘আলগা’ হয়ে পড়া কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, বিক্ষিপ্তভাবে গরু ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছে হলেই গায়ের পাশে চলে আসছে গরু। অনেকেই তাড়ানোর চেষ্টা করে নিজেই সড়ে যাচ্ছেন নিরাপদ দূরত্বে। রাস্তা ও প্রবেশ পথসহ প্রায় সর্বত্রই পড়ে আছে গোবর। লোকজন দেখে পা ফেলছেন। তবুও অসাবধানতায় জুতোয় গোবর লেগে যাচ্ছে।

মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিতু বলেন, ‘গোবর জুতোয় লেগে যায়। এটা বয়ে বেড়ানো বিরক্তিকর।’

নার্সিং সুপারভাইজার মনজুয়ারা বেগম বলেন, ‘গোবরের জন্যই হাসপাতাল নোংরা হচ্ছে বেশি। সেবা নিতে আসা লোকজনের জুতোয় করে আসা গোবর পুরো হাসপাতালেই ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ে গরুর দল। তখন ঝামেলা আরো বাড়ে।’

rangamati-Hospital-01

সংক্রামক বিভাগের সাথে লাগোয়া বাবু স্টোর অ্যান্ড ভাত ঘর এর স্বত্বাধিকারী সাইফুল আমিন (২৮) বলেন, ‘দোকানে এসে গরুর পাল নাশতা, সবজি, ফল সব খেয়ে ফেলে। ঔষধ ও পথ্য কিনতে আসা রোগির স্বজনদের ওপরেও হামলে পড়ছে। গরু এখন আতঙ্কের নাম’।

মেডিকেল কলেজের সামনের দোকানি আক্তার হোসেন (৫৬) বললেন, ‘গরু দোকানের মালামাল নিয়ে যায়। সবখানে এখন গোবর চোখে পড়ে। পরিবেশ নষ্ট করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গরুত্ব দেয় না’। বললেন ‘আগে নিজেই ৮-১০টা গরু পালন করেছি। এসব দেখে সব বিক্রি করে দিয়েছি।’ অবশ্য সাজিয়া বেগম বলেন, ‘মাঝে মাঝে অফিস থেকে বকা দেয়, আবার ঠিক হয়ে যায়।’

মনোয়ারা বেগম (৫০) বললেন, ‘আমি বেকার। দুধ, বাছুর বেচি। কিছু টাকা পাই। দুয়েকটা না পাললে চলে না’। জানালেন তার প্রতিবেশি আবু মিয়া ৬/৭টি আর এরশাদ ৪/৫টি গরু পালন করছে। সব মিলে ৪০/৫০টা হবে। কিন্তু তার সামর্থ (!) নেই বলে মাত্র দুটি পালন করছেন।’

জেডআরজে/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!