পর্যটন নগরী রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের বরাদ্ধ থাকলেও এ বছর পৌরসভার ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজবন বিহার সংলগ্ন হাসপাতাল এলাকার রাস্তা সংস্কারে নেই কোনো বরাদ্ধ।
বাজেটের তথ্যমতে, পৌরসভা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য ১৫ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করে। কিন্তু এত কোটি টাকার বাজেট হওয়ার পরেও রাজবন বিহার সংলগ্ন হাসপাতাল এলাকার রাস্তা সংস্কারে নেই কোনো বরাদ্ধ। যার কারণে রাস্তাটির সংস্কার কাজ না করায় রাস্তাটি বেহাল দশায় পতিত হয়েছে।
এতে রাস্তা দিয়ে রাজবন বিহারে অবস্থানরত বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ, দর্শনার্থী, সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ হাঁটাচলা করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে যানবাহন চলাচলে চরম জনদুর্ভোগও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ অন্যতম বৌদ্ধ তীর্থ প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার সংলগ্ন হাসপাতাল এলাকায় রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি বেড়েছে। রাস্তার বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে ছোট ও মাঝারি যানবাহন আটকে গিয়ে দুর্ভোগে পোহাতে হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁদামাখা ড্রেসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। দীর্ঘমাস যাবৎ বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা রাস্তাটি সংস্কারে দেখা মেলেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
ফলে ঐ এলাকার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপশি পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই রাস্তা দিয়ে বিজয় নগর এলাকা, পিটিআই সংলগ্ন এলাকা ও মৈত্রী নগর এলাকাবাসীসহ কয়েক গ্রামের লোকের আসা-যাওয়া হয়ে থাকে।
এসব স্থানে গাড়ি উল্টে গিয়ে যেকোন সময় দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভিক্ষু-শ্রামন, ছাত্র-ছাত্রী, এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরি রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়াও রাঙামাটি শহরের আনন্দ বিহার সংলগ্ন এলাকা, কলেজ গেট সংলগ্ন আমানতবাগ এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় গর্তের শহরে পরিণত হয়েছে।
রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পৌর এলাকার প্রতিটি রাস্তার স্থায়ী সমাধান হোক এটি সকলের কাম্য। সে কারণে হাসপাতাল এলাকার রাস্তাটির কাজ দ্রুত করা হবে। রাজবন বিহারের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার নির্মাণকাজ নির্মানাধীন হওয়াতে ঐ রাস্তার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না।
কেননা, প্যাগোডার জন্য ইট-বালু- কংকর বড় বড় ট্রাকে নিয়ে আসা হলে রাস্তাটি তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যেতে পারে। তবে পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটে এর রাস্তার কাজ টেন্ডারে নিয়ে আসার আশ্বাস দেন তিনি।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল হোসেন টিটু বলেন, ‘বিজয় নগর এলাকায় একটি ব্রিজের কাজ চলছে। ইট-বালু-কক্রিট বড় বড় ট্রাকে নিয়ে আসা হয়ে থাকে। ফলে রাস্তায় ওভারলোড হওয়ার আশংকা আছে ভেবেই এ বছরে রাস্তাটির সংস্কার কাজ হচ্ছে না। তবে পরবর্তী বছরের অর্থ্যাৎ পঞ্চমবারের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় টিটিসি সড়ক হতে রাজবন বিহার এলাকার সমস্ত সড়কগুলোর সংস্কার কাজ করা হবে।’
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবন বিহারের কয়েকজন ভিক্ষু বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি কাজ না করেন তাহলে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়াতে আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে আমরা চাই রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত করা হোক। কেননা, যখন অল্প বৃষ্টি হয় তখন ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করা খুবই কষ্টকর।
এ বিষয়ে বিজয় নগর এলাকাবাসী আলোকময় চাকমা জানান, রাঙামাটি তথা সমগ্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পবিত্র তীর্থ প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার সংলগ্ন এলাকা এমন হওয়ার কথা নয়। প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী, জনসাধারণসহ বিহারের ভিক্ষু-শ্রামণদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ করে থাকে তাহলে সকলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে আমাদের স্কুলে যেতে হয়। হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার গর্তে পানি জমে থাকা এবং কাঁদা গায়ের জামাতে লেগে যায়। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তাটির যদি সংস্কার কাজ হয়ে থাকে তাহলে সকলের উপকার হবে।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল উদ্দিন বলেন, ‘রাঙামাটির বিভিন্ন পয়েন্টের রাস্তা সংস্কারের কাজ শীঘ্রই করা হবে। অন্যান্য পৌরসভার ন্যায় রাঙামাটি পৌরসভা এ বিষয়ে সর্বদা নজর দিচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের কাজ কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু রাস্তাঘাট নয় রাঙামাটি পৌর এলাকার পরিচ্ছন্নতা ও বৈদ্যুতিক লাইটিংয়ের সমস্যা বিষয়ে পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে অবহতিকরণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’
এএইচ