বর্ষা মৌসুমে গত তিন বছর ধরে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়ে বহু প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। এবার মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতেই কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে শিশু ও নারীর নিহত হওয়ার ঘটনায় ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এছাড়া রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ।
তবে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে স্থানীয় প্রশাসন তৎপরতা জোরদার করেছে।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) এলাকার কলাবাগান মালি কলোনিতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে সূর্য্য মল্লিক (৩) ও তাহমিনা বেগম প্রাণ হারায়। এর আগে ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়ে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালে ১২ জুন ফের পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়ে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়।
শনিবার (৬ জুলাই) থেকে তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণে রাঙামাটি ও কাপ্তাইয়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের আতঙ্ক। প্রবল বর্ষণের ফলে সড়কের বিভিন্নস্থানে পাহাড়ধস ও বৃষ্টির পানির প্রবাহে গতকাল থেকে লংগদু-দীঘিনালা ও রাঙামাটি-বান্দরবান, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, কাপ্তাই ও বরকল উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। তীব্র স্রোতের কারণে জেলা সদর রাঙামাটির সঙ্গে এসব উপজেলার নৌ-যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে যাতায়াত ছাড়াও পণ্য পরিবহনেও বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সতর্কতা না মেনে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে।
রাঙামাটি পৌরসভাসহ জেলার ১০ উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮টি পরিবারের প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিতে আছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রাঙামাটি শহরের কয়েকটি এলাকা। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু শহরেই ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলো হয়েছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তর্পন দেওয়ান জানান, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন ও রাঙামাটি পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত খাবারও মওজুদ রাখা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, কাপ্তাইয়ে দুইজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। সোমবার সারাদিন উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকের বাড়িতেই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বার বার অনুরোধ করা স্বত্বেও লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে সরে যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা থেকে দ্রুত লোকজনকে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে।’
রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, ‘পাহাড়ধসে আর কোনো প্রাণহানি হোক আমরা চাই না। তাই প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ নজরদারী করা হচ্ছে।’
এএইচ