রাঙামাটিতে দেড়মাসে ৫ খুন, সাজেকে এবার কুপিয়ে যুবক হত্যা

পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের দাপট বেশ পুরনো। বিশেষ করে বিবদমান আঞ্চলিক দলগুলোর নাম ভাঙ্গিয়ে চলা সন্ত্রাসিদের হাতে আধুনিক মরণাস্ত্রের অবৈধ মজুদ গড়ে ওঠেছে। ফলে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।

কিন্তু সহজলভ্য এসব অস্ত্র-গুলির পরিবর্তে এবার কুপিয়ে ভাগ্যধন চাকমা (৩০) নামের এক যুবককে হত্যা করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা ভাগ্যধনকে ডেকে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাঙামাটির প্রত্যন্ত দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের গঙারামছড়ার লাঙলমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ভাগ্যধন চাকমা নাঙ্গলমারা এলাকার বরুণ বিকাশ চাকমার ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেনসান চাকমা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে খুনের রহস্য জানাতে পারেনি স্থানীয় পুলিশ।

এনিয়ে গত দেড় মাসে রাঙামাটিতে পাঁচটি হত্যাকাণ্ডে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো। হতাহতদের মধ্যে অবৈধ অস্ত্রধারিদের গুলিতে সন্তু লারমার জেএসএসের একজন, ইউপিডিএফ, সংস্কারপন্থী জেএসএসের ২জন ও একজন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক। আর গুলিবিদ্ধ ও নিখোঁজ হয়েছেন দুজন। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বরাবরের মতোই প্রতিপক্ষকে দুষলেও অস্বীকার করে আসছে দলগুলো।

সাজেকে নিহত ভাগ্যধনের স্ত্রী জবারাণী চাকমা বলেন, ‘রাত ১টার দিকে ৬-৭ জন লোক আমার স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। এরপরই তাকে খুন করে। কি কারণে ও কারা খুন করেছে তা আমি জানি না। আমি খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির চাই।’

চেয়ারম্যান মেনসান চাকমা নয়ন বলেন, ‘ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে ভাগ্যধন চাকমাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাথায় ও চোখের উপরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যারা হত্যা করেছে তারাই জানবে মৃত্যুর রহস্য।’

সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইস্রাফিল বলেন, ‘শুনেছি ওই এলাকায় এক যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে মৃতদেহ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ লাশ নিয়ে ফিরে আসলে বিস্তারিত জানতে পারবো।’

সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি জেলার লংগদু উপজেলায় সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন লারমা) দলের সদস্য পান্ডব চাকমা (৩২) নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারিরা। এ ঘটনায় অর্জুন চাকমা (৩৩) নামের আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ৮ জানুয়ারি জেলার কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে ‘ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক’ বাচিমং মারমাকে (৩০) ‘লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে’ হত্যা করে অস্ত্রধারিরা। ওই ঘটনায় ‘খুনের টার্গেট’ থাকা রাইখালীর গবাছড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) ক্যাচিং মং মারমা গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষংয়ে শুভ চাকমা (৪০) নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারিরা। শুভ চাকমা পাহাড়ের আঞ্চলিক দল প্রসিত খিসার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফের স্থানীয় পরিচালক ছিলেন।
গত ১ ডিসেম্বর রাঙামাটি সদরের আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বড় আদম এলাকায় সুমন চাকমা নামের যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা। নিহত সুমন চাকমা সন্তুলারমা জনসংহতি সমিতি জেএসএসের চাঁদা কালেক্টর বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিপক্ষ সংস্কারপন্থী জেএসএস(এমএন লারমা) দলকে দায়ী করে আসছে সংগঠনটি।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!