রাঙামাটিতে দুই নেতার বিরোধে দলের অফিসে ঢুকতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ

আওয়ামী লীগের ত্রিদিব-ইলিপন বিবাদের আঁচ স্বেচ্ছাসেবকে

রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিবাদ চরমে পৌঁছেছে।

সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বৈঠকে বসতে না দেওয়ায় পুরোদমে চটেছেন জেলার নেতারা।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলার দুই শীর্ষনেতা উপজেলায় ‘মনগড়া’ কমিটি দিয়েছে; তারা এই কমিটিকে ‘বয়কট’ করা হলো বলে ঘোষণাও দিয়েছেন।

অন্যদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের দাবি, পছন্দের লোক নেতৃত্বে না আসায় ‘বাড়াবাড়ি’ করছে উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ কর্ণধার।

নানিয়ারচর উপজেলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস।

রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরেও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে এই বিষয়ে সমালোচনার ঝড় তুললেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান।

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নতুন গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে যারা নেতৃত্বে এসেছেন; তারা প্রায় সকলেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে নিজেদের আধিপত্য না থাকায় নতুন কমিটি বয়কট করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা। মূলত নানিয়ারচরে ত্রিদিব এবং ওহাব-ইলিপন জোটের বিরোধেই এসব বৈরিতা।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি নানিয়ারচর উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনটির জেলা সভাপতি মো. শাওয়াল উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহানের যৌথ সই করা কমিটিতে সুমন দে’কে আহ্বায়ক, মো. হারুনুর রশিদ ও ত্রিরতন চাকমাকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মো. নবী হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়।

২১ সদস্যের কমিটির সদস্য হিসাবে রয়েছেন গোলাম আজম, সুমন রুদ্র, শিপন চাকমা, মো. মঞ্জু, মো. জহির, অজয় দাশ, মো. জসীম খান, পনব কর্মকার, বাবলু তালুকদার, মো. মিজান, পল্লব চাকমা, সুকেন চাকমা, কুলমনি চাকমা, খলিলুর রহমান, বাসু কর্মকার, বিটু নাথ ও মো. শাহ আলম।

আহ্বায়ক কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে উপজেলায় সম্মেলন করার নির্দেশ দেয় শাওয়াল-শাহাজাহানের নেতৃত্বাধীন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান বলেন, ‘দুই বছর আগে আমরা নানিয়ারচর উপজেলায় একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছিলাম। সেই কমিটি গত দুই বছরেও উল্লেখজনক কোনো কার্যক্রম করতে পারেনি। এই কারণে বছরখানেক ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানালেও তারা সহযোগিতা করেননি। পরবর্তীতে আমরা ২ জানুয়ারি ২১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছি। যে কমিটি সামনের তিন মাসের মধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে গুছিয়ে সম্মেলন দেবে।’

তিনি বলেন, ‘তবে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকের পছন্দের মানুষ না আসার তারা এখন ‘বাড়াবাড়ি’ করছে। তারা চেয়েছিল একসঙ্গে বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে। কিন্তু আমরাতো গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করতে পারি না।’

শাহাজাহান আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কম্বল বিতরণের উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করার জন্য দলীয় কার্যালয়ের চাবি চাইলে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাদের কার্যালয়ের চাবি দেননি। দলীয় কার্যালয়কে তো কেউ ব্যক্তিগতভাবে চালাতে পারেন না।’

দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা নিয়ে জানতে নানিয়ারচর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক সুমন দে’র সেলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। এরপর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হারুনুর রশিদের মুঠোফোন কল দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার বলেন, ‘জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্টে দেখলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নাকি দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি, আর ফেসবুকে দেখার কারণে আমিও খুব বেশি খবরাখবর রাখিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলপন চাকমা এলাকায় ছিলেন, তিনি বিষয়টি ভালো করে জানবেন। আমি গত ১৫ জানুয়ারি নানিয়ারচরে সেতুর নামফলক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই উপজেলায় ছিলাম না, গতকাল (শনিবার) এসেছি।’

তবে উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওহাব। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন হোক, বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জেলা নেতৃবৃন্দকে বলেছি, আপনারা উপজেলায় আসেন আমরা সকলে আলাপ-আলোচনা করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করব। যেটি পরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। কিন্তু জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা আমাকে (সভাপতি) পাঁচজনের নাম, সাধারণ সম্পাদককে পাঁচজনের নাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ১০ জনের নাম দেবেন বলে জানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, নানিয়ারচর আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং নেই, আপনারা তিন গ্রুপে ভাগ করছেন কেন? পরে তারা জেলা থেকে উপজেলায় একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে। আমরা এই কমিটি মেনে নিইনি। কারণ উপজেলায় আওয়ামী লীগ আমরা করি, তারা জেলা থেকে এসে চালাবে না।’

এই প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমাকে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ত্রিদিব কান্তি দাশ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমিতো এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে নেই, উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরাই বিষয়টি ভালো জানবেন। জেলা কমিটি সমন্বয়ের মাধ্যমে উপজেলায় কমিটি দেবে, এটাইতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘একসময় আমরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ধরেছি। এখনতো অনেকেই সাজানো চেয়ারে এসে বসেছেন। দল নিয়ে এখন এই ধরনের কথা শুনলেও কষ্ট লাগে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!