রাউজানে দূর্গন্ধময় অন্ধকার ঘরে শেকলবন্দী এক বৃদ্ধ মায়ের আর্তনাদ “আমাকে ভাত দে”

গাজী জয়নাল আবেদীন, রাউজান :

বাইরে থেকে দরজায় তালাবদ্ধ অন্ধকার একটি কক্ষ। কক্ষের পাশে দাড়ালে ভেতর থেকে ছুটে আসে একধরণের দূর্গন্ধ। এমনি একটি কক্ষের ভিতরে বন্ধি পায়ে শেকল দ্বারা খাটের (চৌকির) সাথে আটকানো ৬৫ বছর বয়সী মীরা দে। কক্ষের বাইরে কোন আগুন্তুকের কন্ঠ শুনলেই বৃদ্ধ মীরা বলছে ‘ইবা কন, কন আইস্যিাদে, কিল্লা আইস্যিাদে’ (সে কে, কি জন্যে আসছে) কিংবা অ্যাই ভাত খাইয়ুম, অ্যারে দু’য়া ভাত দে’ (আমি ভাত খাবো, আমাকে অল্প ভাত দাও)।

raozan-ctg-news-pict-29
এমনি মনবতাহীন ঘটনার অবতারণা ঘটেছে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন বাড়ীতে। সেখানে অসুস্থ মীরা দে’কে তিনমাসের বেশিসময় ধরে পায়ে শেকল পরিয়ে অন্ধকার ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন তার সন্তানরা। ব্যাপারটি প্রতিবেশী সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা জানান, মীরা দে প্রায় দেড়-দুইবছর ধরে মানসিক সমস্যা ভূগছেন। তিনমাস ধরে মীরাকে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন কিংবা পাগল নয়। তিনি প্রতিবেশী ও স্বজনদের চিনতে পারেন। ভাত খেতে চান, শেকল খুলে দিতে বলেন। ডাক্তারের কাছে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তর দেন। এরকম মহিলাকে চট্টগ্রাম কলেজ হাসপাতাল বা অন্যকোন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। অথচ তার সন্তানরা সেটি না করে তাকে পায়ে শেকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় রেখেছেন ঘরের মধ্যে।
প্রতিবেশী ও স্থানীয় জনসাধারনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধা মীরা দে’র স্বামী বিরেন্দ্র দে মারা যান বহুবছর আগে। তার দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে অঞ্জন দে’র দোকান আছে রাউজানে। কাঞ্চন দে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন কর্মসূত্রে। মীরার মেয়ে সন্তানের বিয়ে হয়ে গেছে। দেড়বছর আগে মীরার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক আচারণের কারনে তাকে কখনো শেকল পরিয়ে রাখা হয়নি। কিন্তু গত তিনমাস ধরে তাকে দুর্গন্ধময় একটি কক্ষে শেকল পরিয়ে তালাবদ্ধ রেখেছেন তার সন্তানরা। এ বিষয়টিকে অমানবিক বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।

raozan-ctg-news-pic-29-1
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী মহিলা বলেন, ‘আমি বাইরে থেকে এসেছি বুঝলে আমাকে ভাত দিতে বলেন। সাধ্যমত চেষ্টা করি তাকে খাবার দিতে। তার ছেলেরা তাকে মেডিকেলে না নিয়ে গিয়ে কেন শেকল পরিয়ে রেখেছেন বুঝছিনা, সবসময় শেকল খুলে দিতে বলেন মীরা। খারাপ লাগে তার জন্যে।’ এব্যাপারে প্রতিবেশী রত্না চৌধুরী ও কমলা চৌধুরী বলেন ‘শেকল পড়া থেকে মুক্ত হতে আর্তনাদ করেন বৃদ্ধা মীরা।’
এব্যাপারে মীরার ছেলে অঞ্জন দে’র স্ত্রী শিবু দে বলেন ‘দেড় বছরেরও অধিক সময় ধরে শ্বাশুড়ি অসুস্থ। ঔষধ খেতে চায়না। ঝোঁপ জঙ্গলে চলে যায়। তাই তাকে গত তিনমাস ধরে শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। সেই ঘরেই তাকে খাবার দেয়া হয়। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেনও সে ঘরে।’
এব্যাপারে মীরার ছেলে কাঞ্চন দে’র কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘মানসিক সমস্যার কারনে তাকে (মাকে) কিছুদিন ধরে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসা করাবো।’

 

এব্যাপারে স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর এডভোকেট দীলিপ চৌধুরী বলেন ‘মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে এক মহিলাকে আটকে রাখার কথা শুনেছি। বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো।’ এদিকে এ প্রতিনিধি সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে মীরার ছবি তোলার সময় তিনি মুখ ঢেকে রাখেন। বিষয়টি স্থানীয়রা প্রত্যক্ষ করে বলেন সে পাগল হতে পারে না। সে যদি পাগল হত লজ্জায় মুখ ঢাকত না।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!