রাউজানের কমিশনার আলমগীরের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণচেষ্টা মামলা

চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরার কমিশনার আলমগীর আলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নীলু বড়ুয়া নামে এক নারীকে নির্যাতন, অপহরণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার (০১ জুলাই) লিগ্যাল এইডের সহায়তায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে এ মামলা হয়।

মামলার বাদি নীলু বড়ুয়া এ বিষয়ে বলেন,‘কমিশনার আলমগীর আলী বহুদিন ধরে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমি রাজি হইনি। ১৯ তারিখ বিকাল চারটার দিকে কল করেছিলো। আমি ধরিনি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে এসে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ও শারীরিক নির্যাতন করে। ওরা আমাকে ও আমার ছেলেকে অপহরণের চেষ্টাও করে। পরে স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় কমিশনারের লোকজন কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে।’

সোমবার (১ জুলাই) নীলু বড়ুয়া লিগ্যাল এইডের সহায়তায় নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আলমগীর আলী প্রধান অভিযুক্ত ও মো.দিদার আলম এবং অজ্ঞাতনামা আরো দুইজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

নীলু বড়ুয়ার ছেলে সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘১৯ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে কমিশনার আলমগীর আলী ও তার সহযোগী দিদারসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে এসে দরজার কড়া নাড়ে। মা বলেন,এত রাতে কেন এসেছেন? কাল সকালে আসবেন।কমিশনার সাহেব বলেন, আমি কমিশনার আলমগীর আলী। দরজা খুলুন, কথা আছে।এর কিছুক্ষণ পর মা দরজা খুলে দেয়। ঢুকেই তারা মাকে একরুমে আর আমাকে আরেক রুমে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। আমরা তখন চিৎকার করছিলাম। পাড়ার একাটি ছেলে সেদিন পুকুরে ডুবে মারা যাওয়ায় পাড়ার সবাই স্থানীয় বিহারে ছিলেন। এক পর্যায়ে আমাদের হাত-পা বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে সিএনজিতে তোলা হয়।কমিশনার আলমগীরের মাছের প্রজেক্ট ছিল পুকুর পাড়ে। সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো আমাদের। বিহারের সামনে আসলে আমি লাফ দিয়ে সিএনজি থেকে নেমে বিহারে ঢুকে যাই। তখন বিহারের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে বিহারে নিয়ে যায়।আমরা সেদিন পুরো রাত বিহারে ছিলাম।’

এ বিষয়ে রাউজান থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে দাবি করেন থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ। তবে পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তারা বিষয়টি শুনে মঙ্গলবার (২ জুলাই) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

আদালতে এ মামলা পরিচালনা করছেন অ্যডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া (লিগ্যাল এইড, চট্টগ্রাম)।

মামলার বিবরণে তিনি বলেন, ‘বাদি নিলু বড়ুয়ার সাথে তার স্বামী সনদ বড়ুয়ার দীর্ঘদিন যাবৎ পারিবারিক কলহ চলছিল। সনদ বড়ুয়া বিদেশে থাকতেন। তিনি নিয়মিত পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতেন না এবং কোন রকম ভরণপোষণ দিতেন না। তখন থেকে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। নীলু বড়ুয়া ছেলে সৌমেনকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। তাই স্থানীয় কমিশনার আলমগীর আলীর কাছে তিনি বিচার চাইতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু আলমগীর আলী কোন বিচার না করে উল্টো আমার বাদিকে কুপ্রস্তাব দেন। কুপ্রস্তাবে রাজি নাহলে ছেলেকে অপহরণের হুমকি দেন এবং ঘর-বাড়ি,জায়গা-সম্পত্তি আত্মসাত করার ভয় দেখান। ভয়ে এতোদিন তিনি আইনের আশ্রয় নেননি। তার স্বামী সনদ বড়ুয়ারও কমিশনারের সাথে যোগসাজস ছিল বলে জেনেছি। তিনি চেয়েছিলেন নীলু বড়ুয়াকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উৎখাত করতে। ঘটনার দিন পাশের বাড়ির একটা ছেলে পুকুরে ডুবে মারা যাওয়ায় পাড়ার লোকজন সবাই বিহারে ছিলেন। এই সুযোগে ১৯ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে কমিশনার আলমগীর আলী ও তার সহযোগী দিদার আলম বাদিকে অপহরণ করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।’

এসবি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!