রহস্যের গন্ধ মিলছে ঢাকায় বান্ধবীর বাসায় চট্টগ্রামের খেলোয়াড়ের মৃত্যু ঘিরে

রাজধানীতে নারী সহকর্মীর বাসায় চট্টগ্রামের ছেলে আনসারের তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় কামরুল ইসলামের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে ফিরতে নিয়েছিলেন দুই দিনের ছুটিও। কিন্তু কামরুলের আর তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে ফেরা হল না। তার আগেই অজ্ঞাত কোনো কারণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি বাসায় ‘গলায় ফাঁস’ নেন ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ।

শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তায়কোয়ান্দো খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন কামরুল ইসলাম। একের পর এক পদক জিতে নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্নমাত্রায়। খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। বাংলাদেশ আনসার জাতীয় তায়কোন্দো দলেরও ভাতাপ্রাপ্ত খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। পাশাপাশি জুডো, ক্যারাটে ও তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণও দিতেন। তায়কোয়ান্দো মার্শাল আর্ট জাতীয় খেলা। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় খেলা এটি।

১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া কামরুলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ শিকলবাহা এলাকায়। বাবা আবদুর রহিম মারা গেছেন আগেই।

পুলিশ ও সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে জুডো, ক্যারাটে ও তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ দিতেন কামরুল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নারী ওই স্কুলে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এর সুবাদে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কামরুল রাজধানীর ফকিরাপুলের গরম পানির গলি এলাকায় থাকতেন। বৃহস্পতিবার তিনি বছিলায় তার সহকর্মীর বাসায় যান। রাতে সেখানেই ছিলেন। পরে শুক্রবার সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

কামরুলের ওই নারী সহকর্মী জানান, বৃহস্পতিবার হঠাৎ তাকে ফোন করেন কামরুল। এসময় তিনি রাতে একসঙ্গে খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর বিকেলে দু’জনের দেখা হয় এবং তারা বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করেন। রাতে খাওয়ার পর তারা আলাদা ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ভোরে কামরুলের ঘরে গিয়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। তখনই তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই নারী পুলিশকে জানান, কোনো কারণে কামরুলের মন ভীষণ খারাপ ছিল। যদিও সে ব্যাপারে তিনি কিছুই খোলাসা করেননি। এরপর ‘আত্মহত্যা’র ঘটনা ঘটে। তবে কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন তাও বলতে পারেননি ওই নারী।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. সাজেদুর রহমান বলেন, মৃত যুবকের গলায় ফাঁস দেওয়ার মতো চিহ্ন ছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সহকর্মীর ভাষ্য, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন কামরুল। প্রাথমিকভাবে পুলিশেরও তেমনটাই মনে হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।

কামরুলের মৃত্যুর পর তার ওই নারী সহকর্মীকে আটক করে ঢামেক হাসপাতাল ক্যাম্পের পুলিশ। ঘটনার ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, নারী সহকর্মীর সঙ্গে কামরুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দুজনের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কামরুলের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!