রসালো মাল্টা হাসছে চট্টগ্রামের পাহাড়ে, ৪ বছরে ফলন বেড়েছে চারগুণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের ঢালেও পরিত্যক্ত জায়গায় মাল্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। ৮ হেক্টর পাহাড়ি জমিজুড়ে চাষ করা হয়েছে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এ ফল। খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে।

উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশবাড়িয়া পাহাড়ের ঢালে মাল্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে প্রবাসীফেরত মো. জাহাঙ্গীর আলম। শুরুতে পাহাড়ি জমিতে আম, লিচু, বড়ইয়ের চাষ করলেও লাভ হচ্ছিল না তেমন। পরে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে মাল্টা চাষ করেও দেখেন সাফল্যের মুখ। এবার তার মাল্টা উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। গত চার বছরে তার মাল্টা উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

তবে এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় শুরুতে একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু বাগানের পাশে নিজস্ব পুকুর থাকায় সেচ দিয়ে পানির চাহিদা মেটানো হয়েছে। ঠিকঠাক গাছের পরিচর্যা করতে পারলেই মাল্টার উৎপাদন ভাল হয় বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি দুবাই থেকে আসার পর পাহাড়ের ঢালে প্রথমে আম, লিচু, আপেল বড়ইয়ের চাষ করেছি। কিন্তু এসবে খরচ পড়ে অনেক বেশি, লাভ হয় কম। এরপর এই বাঁশবাড়িয়া ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনছুর চার বছর আগে আমাকে মাল্টা চাষের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে ৮০ শতক জায়গায় ১০০ মাল্টার চারা লাগাই। সেবার সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা, মাল্টা উৎপাদন হয়েছিল ১৫০ কেজিরও বেশি। আত্মীয়স্বজনদের দেওয়ার পরও আমি তখন ৩৫ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আগের চেয়ে মাল্টার উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। বাজার দর ভাল থাকলে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মাল্টা পাকতে শুরু করবে। এরপর সংগ্রহ করবো। এর আগে ২০২১ সালে মাল্টার উৎপাদন হয়েছে প্রায় দেড় টন। তখন ২০০ টাকা হিসেবে উপজেলার বাড়বকুণ্ড, শুকলালহাট, কুমিরা, ভাটিয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে মাল্টা বিক্রি করেছি প্রায় ২ লাখ টাকার।’

এ এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনছুর বলেন, ‘পাহাড়ি মাটিতে তেমন সার লাগে না। শুধু নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ফল লাগানো থেকে শুরু করে মাল্টা উৎপাদনের শেষ পর্যন্ত সৌখিন চাষী মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গেই ছিলাম আমি। তাকে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সকল রকম কারিগরি সহায়তা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০ জন কৃষক বিভিন্ন স্থানে মাল্টার আবাদ করেছেন। তারমধ্যে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের সৌখিন কৃষক প্রবাসী মো. জাহাঙ্গীর আলমের মাল্টা বাগান অন্যতম।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ্ আলম ও মনছুরকে সঙ্গে নিয়ে জাহাঙ্গীরের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে মাল্টা। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা প্রতিদিন নিয়মিত মাল্টা খেতে পারলে ভাল। কৃষক পরিবারগুলো ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে এবং পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন রকম ফল ও সবজির পাশাপাশি সুস্বাদু মাল্টার চাষ করতে পারলে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হবে তেমনি লাভবান হবে চাষীরাও।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!