‘এখানে সকল রোজাদারকে বিনামূল্যে ইফতার করানো হয়’- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসাতালের প্রধান গেইটের সামনে সম্প্রতি এ রকম একটা ব্যানার হয়তো অনেকেই দেখেছেন। মেডিকেলের ভেতরে থাকা ‘সিএমসি’ ক্যাফে মোটামুটি সবাই চেনেন। রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন হয়ে থাকে এই ক্যাফেতে। সিয়াম সাধনার মাস রমজানের পুরো ৩০ দিন ধরে চলবে এই ‘বিনামূল্যে ইফতার’ বিতরণ।
চমেক হাসপাতাল এলাকার পথচারী, ট্রাফিক পুলিশ, রোগীদের আত্মীয়-স্বজন, ডাক্তার, ধনী-গরিব কোন ব্যবধান নেই এখানে। যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন সিএমসি ক্যাফের ইফতারে। ক্যাফের ভিতরে-বাইরে মিলে রমজান মাসের প্রথম দিন ৭ মে মঙ্গলবার প্রায় ২৫০ জন, দ্বিতীয় দিন বুধবার ২৮০ জন, তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ৩৭৫ জন এবং চতুর্থ দিন ২৮০ এর মতো রোজাদার সিএমসি ক্যাফেতে ইফতারে অংশগ্রহণ করেছেন। একই সাথে চমেক হাসপাতালের মসজিদসহ এলাকার দুটি মসজিদে বিতরণ করা ইফতার। প্রতি রোজাদারের জন্য ইফতারের বাজেট রাখা হয়েছে ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকা। পুরো রমজান মাসের জন্য সিএমসি ক্যাফের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। প্রতিদিন যতজন ইফতার করবেন, ততজনের ব্যয় পরিশোধ করা হয়।
রোজাদারদের সেবার উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণের এই পুরো আয়োজনটা আল হাকিম ট্রাস্টের কর্ণধার ব্যবসায়ী আজিজুল হাকিমের। এবার এই কাজটিতে আজিজুল হাকিমের সাথে যোগ দিয়েছেন বারকোডের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী মনজুরুলক হক। চমেকের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীরসহ অনেকে এই কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তাদের সাথে বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকে আর্থিক সহযোগিতা করছেন।
‘রমজান মাস আসলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। রোজাদারদের খাবারের দাম বেড়ে যায়। ধনী লোকেরা দামি দামি খাবার কিনে নিয়ে যায়। আমরা রোজাদাদের মুখে সামান্য ইফতার তুলে দিতে চাই। সামাজিক আন্দোলন হিসেবে সিএমসি ক্যাফে বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করা। হাদিসে আছে, একটা খেজুর বা এক গ্লাস পানি দিয়েও কোন রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।’ এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এ ধরনের আয়োজন বলে জানালেন ব্যবসায়ী আজিজুল হাকিম।
আজিজুল হাকিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের এই উদ্যোগ দেখে পাড়া-মহল্লায় আরো দশজন মানুষ যেন এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসেন। টাকাটা আসল বিষয় নয়; নিয়তটা হলো আসল। যে কেউ চাইলে আমাদের এই কাজে সহযোগিতা করতে পারেন। দশ টাকা দিয়ে হলেও একটা ভালো কাজের অংশীদার হতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণের রেওয়াজ আজ। আমাদের দেশেও পাড়া-মহল্লায় শুরু হোক এই ধরনের সামাজিক আন্দোলন।’
ব্যবসায়ী মনজুরুল হক বলেন, ‘একটা ভালো কাজ। তাই আজিজুল ভাইয়ের সাথে যোগ দেওয়া। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের এই উদ্যোগ। এই ধরনের আয়োজনের প্রধান কারণ হলো ভালো কাজে অন্যদের অনুপ্রাণিত করা। কেউ যদি এই ভাল কাজের সাথে শরিক হতে চায়; তাহলে আমার সাথে কিংবা আজিজ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।’
‘রমজানের প্রথম দিন আমাদের অতিথি হিসেবে প্রায় ২৫০ জন রোজাদার ছিলেন। আশা করি এর সংখ্যা বাড়লেও আমরা প্রস্তুত থাকবো।’ যোগ করেন তিনি।
গত বছরের রমজান মাসে এই ধরনের আয়োজনটি করা হয়েছিল চমেক এলাকার ঝাল বিতানে। সেবার পুরো রমজান মাসে প্রায় দশ হাজার রোজাদার ইফতারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জানালেন আজিজুল হাকিম।