যে কারণে বিফলে যেতে পারে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম

শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাসব্যাপী বাজার মনিটরিং কার্যক্রম। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর। শুরুর দিনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং রেয়াজুদ্দীন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে মনিটরিং টিমে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিয়ে মনিটরিং টিমের সুফল এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

রোববার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাতুনগঞ্জে বাজার মনিটরিং টিমে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের মিডিয়া কর্মকর্তা মোকাম্মেল হোসেন। তার উপস্থিতির কারণে অভিযানের গ্রহণযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক সমাজের অনেকেই। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অবশ্যই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবে। অভিযান পরিচালনাকারী টিম কোন্ বাজারে যাবে তা আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়ার আশংকা করছেন তারা।

সরেজমিন খাতুনগঞ্জে বাজার মনিটরিংয়ে দেখা যায় চট্টগ্রাম চেম্বারের কর্মকর্তা মোকাম্মেল হোসেন টিমের সঙ্গে সঙ্গেই থাকছেন। বিভিন্ন দোকানে অভিযান পরিচালনার সময় যেসব দোকানে জরিমানা করা হয়েছে সেসব দোকানের মালিকরা তাকে দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

যে কারণে বিফলে যেতে পারে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম 1

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মাঝে মধ্যে যে ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রতিনিধি না থাকলে নেতিবাচক ঘটনা ঘটারও আশংকা থাকে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় অভিযানের সময় ব্যবসায়ীরা ঘেরাওসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকে। এসব ঘটনা এড়ানোর জন্য চেম্বারের প্রতিনিধিদের রাখা হয়।

রমজান এলেই বাজার মনিটরিংয়ের তোড়জোড় শুরু হয় কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ক্যাবের পক্ষ থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি সারা বছর যাতে বাজার মনিটরিং করা হয়। কিন্তু যারা শোনার তারা তো শোনে না। সারা বছর মনিটরিংয়ের আওতায় থাকলে বাজারে অকারণে মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা নেতিবাচক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণে আসতো।

এই বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে চেম্বার প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের রাখা হবে না।

তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথেও মিটিং করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, অযাচিতভাবে জরিমানা করা নয়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এখানে তথ্য ফাঁস হওয়ার প্রশ্ন আসবে কেন? বাজার মনিটরিংয়ের সময় চেম্বার প্রতিনিধির কাজ হলো ব্যবসায়ীরা সত্যিকার অর্থে ঠিক পণ্যটি বিক্রি করছে কিনা তা দেখা। এটি ওপেন সিক্রেট। পণ্য কোথা থেকে কেনা হলো, পণ্য পরিবহনে কত টাকা ব্যয় হলো এ বিষয়টিও চেম্বার প্রতিনিধি মনিটরিং করবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের মিডিয়া কর্মকর্তা মোকাম্মেল হোসেন বলেন, আমি বাজার মনিটরিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলাম। ব্যবসায়ী নেতা বা ব্যবসায়ীদের মনিটরিংয়ের তথ্য জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।

এদিকে খাতুনগঞ্জে বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে দুটি দোকানে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মূল্যতালিকা না থাকায় হাজী স্টোরকে ২ হাজার টাকা এবং স্যাঁতসেতে ও গুমোট পরিবেশে খেজুর গুদামজাত করার দায়ে মেসার্স খান ব্রাদার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের সময় দোকানে পণ্যের তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম।

অভিযান শেষে তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের প্রথম দিন হিসেবে পণ্যের মূল্য টাঙ্গানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। পরবর্তীতে অভিযানে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযানে সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোলাইমান বাদশা, ক্যাব প্রতিনিধি সেলিম সাজ্জাদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের মিডিয়া কর্মকর্তা মোকাম্মেল হোসেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!