যে কারণে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছেই না

নুনের মতো পেঁয়াজ ছাড়া যেন রান্না চলেই না। ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর এ সুযোগে চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। লাগাম টানতে প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যে ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে কয়েক দফা অভিযান চালায়। অভিযানে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি। গত ৩ দিনে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর কেজিতে অন্তত ২০ টাকা কমলেও খুচরায় ৩ দিন আগের দাম সর্বোচ্চ ৭৫-৮০ টাকায় আবার কোথাও কোথাও ৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি।

নগরীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। আবার সুযোগ বুঝে কোথাও কোথাও ৯০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। কর্ণফুলী বাজারের মুদি দোকানি হারুন জানান, ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ তিনি খুচরায় ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে আরেক দোকানি ওমর ফারুক বলেন, তার কাছে রয়েছে চার দিন আগে কেনা পেঁয়াজ। সে কারণে তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছেন না।

আবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্ণফুলী বাজারের বেশিরভাগ দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা করে। এখানে বিক্রেতাদের মধ্যে অনমনীয় মনোভাব দেখা গেছে। পাইকারিতে কমলেও খুচরায় কমছে না কেন—তার কোনো সদুত্তরও নেই তাদের কাছে। কেউ কেউ বলছেন, পাইকারিতে বাড়তি দাম দিয়ে কেনা পেঁয়াজ নূন্যতম দামেই বিক্রি করছেন তারা।

খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, ১ অক্টোবর থেকে ভালোমানের পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকায় পৌঁছেছিল। তবে তা কমে গতকাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা করে বিক্রি হলেও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রশাসনের তদারকিতে পাইকারি বাজারে দাম পড়লেও প্রভাব পড়েনি খুচরায়। এদিকে প্রশাসনও অনেকটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে লাগাম টেনে দিয়েছে অভিযানে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারের পেঁয়াজের দামে তফাৎ নিয়ে বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এটা বাস্তব কারণেও হতে পারে। অনেকে হয়তো বেশি মূল্যে যে পেঁয়াজ কিনেছিলেন সেগুলোই এখন বিক্রি করছেন। আবার বাজারের উত্থান-পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে অধিক মুনাফাও করতে পারেন।’

এদিকে সরকারি নজরদারি চলমান থাকায় পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব না পড়ায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

ক্রেতা কামরুন নাহার বলেন, ‘শুধু অভিযান হয় শুনি। কিন্তু দাম তো কমে না। সেই গলাকাটা দামই রাখে। তাইলে এই অভিযানের দাম কি?’

বন্যা ও ভারী বর্ষণের কারণে কয়েকটি রাজ্যে পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে। এদিকে এ ঘোষণার সুযোগ নেয় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে ১০০ টাকায় পৌঁছায়। অন্যদিকে খুচরায় কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ১২০-১৫০ টাকায়ও ছাড়ায়। প্রশাসনের কয়েক দফা অভিযানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুচলেকা দিয়ে দাম কমালেও খুচরায় প্রভাব তেমন পড়েনি। চারদিন আগে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমে ৫৫-৬০ টাকায় দাঁড়ালেও এই দাম বহাল আছে। অন্যদিকে খুচরায় এখনও ৭৫-৮০ আবার ৮০-৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সোলায়মান বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পেঁয়াজের সংকট নেই। মিশর থেকে আরও পেঁয়াজ আসছে। সামনে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। কারণ পেঁয়াজ পচনশীল। তাই আগের পেঁয়াজগুলো অল্প দামে হলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছেড়ে দিচ্ছে। মাঝারি মানের পেঁয়াজ ৩৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে তো কমই আছে কিন্তু খুচরায় নেই। তাছাড়া খুচরা বাজারে অভিযান চলছে না তাই তারাও যা পারছে তাই রাখছে।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ছগীর আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ীই দাম রাখছি। অভিযান চলে পাইকারিতে, কিন্তু আসল লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাই। এ নিয়ে প্রশাসনও চুপচাপ।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে কয়েকদিন ধরে টানা বড় বড় প্রোগ্রাম চলছে। তাই অভিযানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম সহনশীল আছে। তবে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ২০ টাকা লাভ করা অন্যায়। দেখি আমরা আবারও অভিযানে নামবো। যত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

এসআর/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!