যুবলীগ পরিচয়ে পতেঙ্গাজুড়ে এক নেতার নির্বিচার চাঁদাবাজি

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ফরিদুল আলম নামে এক কথিত যুবলীগ নেতা ও তার কয়েকজন সহযোগীর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। তাদের নির্বিচার চাঁদাবাজির কারণে স্থানীয় নেতাদের অনেকেই বিব্রত। শুধু চাঁদাবাজি নয়, ফরিদুলের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী-ইপিজেড এলাকায় টেন্ডারবাজিরও অভিযোগ রয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর পতেঙ্গা থানায় ইলিয়াছ নামের এক মাছ ব্যবসায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেছে। এতে অভিযুক্ত অন্যরা হলেন পতেঙ্গার হোসাইন আহমদ পাড়ার মৃত নুর আলমের ছেলে শহিদুল ইসলাম টিটু (৩৮), আবুল কালামের ছেলে মো. আবছার ও আলতাফ মিয়ার ছেলে মো. শাহজাহান (৩৭)।

স্থানীয় মুসলিমবাদ বেড়িবাঁধ এলাকার কয়েকজন বোট মালিক ও বরফ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ফরিদের লোকজন প্রতিদিন এসে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। বৈধ ব্যবসা করছি। তাতেও চাঁদা দিতে হচ্ছে। সব বোট মালিকই তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।’

জানা গেছে, ফরিদুলের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গার মুসলিমাবাদ-আকমল আলী বেড়িবাঁধ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার ১০০টি নির্দিষ্ট স্থান থেকে চাঁদা ও কমিশন নেয় নিয়মিত।

জহুল আহমদ নামে এক ঠিকাদার জানান, ‘মাসখানেক আগে কর্ণফুলী ইপিজেডের একটি গার্মেন্টসে আমার প্রতিষ্ঠান ক্যাটারিং সাপ্লাইয়ের কাজ পায়। পরে ওই কাজটি প্রভাব খাটিয়ে ফরিদ তার প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়ে নেয়।’

সাবেক কাউন্সিলর আবদুল বারেক বলেন, ‘অভিযুক্ত অপর ব্যক্তি শহিদুল আলম টিটু স্থানীয় থানা যুবলীগের কথিত সভাপতি ফরিদুল আলমের ভাইজি জামাই। শহীদ ফরিদুলের সহযোগী। তার বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে।’

৪০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন জানান, ‘পতেঙ্গা এলাকায় বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে ব্যানার টাঙিয়ে ফরিদুল আলম নিজেকে পতেঙ্গা থানা যুবলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে আসছিল। বাস্তবে সে এ পদের কেউ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সালের যুবলীগের ৫১ জনের ওয়ার্ড কমিটিতে ফরিদুল আলম ও শহিদুল আলম টিটু নামেও কোনো সদস্য নেই। কেউ যদি কমিটিতে না থেকেও প্রচার করে বেড়ায় সেটা তো অন্যায়।’

৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুল বারেক বলেন, ‘ফরিদুল আলম ওয়ার্ডের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক। গঠনতন্ত্র মোতাবেক থানা যুবলীগের কোনো পদে সে নেই।’

সোমবার (৭ অক্টোবর) ফরিদুল আলমকে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে গালিগালাজ করে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমি নেতা হিসেবে পুরোপুরি সৎ না হলেও আমার বিরুদ্ধে কিছু রাজনৈতিক নেতা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোন চাঁদাবাজির সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলাম না। নিজের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আছি।’

পতেঙ্গা থানায় ইলিয়াছ নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শহিদুল আলম বলেন, ‘ইলিয়াছ থেকে টাকা পাই, তাই টাকা চেয়েছি। মুসলিমাবাদে কিছু অংশের ‘ফার’ (মাছ ধরার স্থান) আমার। ওই অংশে প্রতি বোট থেকে কমিশন চাওয়ার আমার অধিকার আছে। ইলিয়াসের কাছে টাকার জন্য ফোন করলে তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।’

জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী ইলিয়াছ বলেন, ‘বঙ্গোসাগর ফারের মালিক সরকার। তাই কৌশলে টিটুসহ বাকিদের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাছ আহরণ করেছি। সামনে আর মাত্র একটি পূর্ণিমা রয়েছে। অতিষ্ট হয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ চেয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

অভিযোগের কথা স্বীকার করে পতেঙ্গা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুধীর পাল বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। এসেই বিষয়টি তদন্ত করবো।’

মোআ/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!