যুবলীগ নেতা পরিচয়ে এক নাছিরের যত অপকর্ম

‘প্রশান্তি’ পিকনিক স্পট ঘিরেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড তার

গাছ চুরির মামলায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. নাছির উদ্দিনের অপকর্মের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। নাছিরকে বহিষ্কারের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছলে তারা উৎফুল্ল হয়ে উঠেন। গাছ চুরির ঘটনায় নাছির আটক হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে কাপ্তাই ‘প্রশান্তি’ নামের বনবিভাগের পিকনিক স্পট সন্ত্রাসী কায়দায় জোর করে দখলে নেয় নাছির। ওই সময় নাছিরের সন্ত্রাসী বাহিনীর বাধার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ অফিসে দরপত্র দাখিল করতে পারেনি চট্টগ্রাম থেকে আসা ৫-৬ জন ঠিকাদার। এমনকি নাছির যুবলীগের প্রভাব কাটিয়ে দরপত্রের বাক্সও ছিনিয়ে নেয়। ওই সময় দরপত্র দাখিল করতে যাওয়া দু’একজন ঠিকাদারকেও পুলিশের সামনে মারধর করে নাছির। ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে।

অভিযোগ রয়েছে বনবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাও নাছিরের রোষানলের শিকার হয়েছেন। তিনি অস্ত্রের জোর দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনকে মারধর করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। বনবিভাগের পিকনিক স্পট ‘প্রশান্তি’তে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা নাছির ‘দরপত্র’ ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রশান্তিতে বসে রাতের আঁধারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবৈধ কাঠ পাচার করছে। এছাড়া আরও কিছু বনভূমিও দখলে দিয়েছেন তিনি। এসব অপকর্মের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি বন বিভাগের মামলায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাছির উদ্দিনকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন আদালত। একই মামলার আরেক আসামি রাহুল তংচংগ্যা ওরফে বাবুল মেম্বারকে দেড় বছর সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘যেহেতু তার (মো. নাছির উদ্দিন) বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলায় তিন বছরের সাজার একটি আদেশ হয়েছে, সে কারণে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্ত করেছে। বন বিভাগের প্রায় ৩০ লাখ টাকার বনজ সম্পদ আত্মসাতের একটি মামলায় জেল খেটেছেন তিনি।’

এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এসব মিথ্যা মামলা। এসব দলীয় গ্রুপিং ও প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। এই মামলায় জেল খেটেছি, আপিল করেছি। ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্তের বিষয়টি শুনেছি, তবে কোনো নোটিশ পাইনি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!