যুবদল নেতা এবারও চান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, তৃণমূলে ক্ষোভ লোহাগাড়ায়

ছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে চেয়ারম্যান হন। তারপর আবার আগের দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই সামলান স্থানীয় রাজনীতি। তবে এবারও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন তিনি। আর সেই প্রার্থীর মনোনয়ন ঠেকাতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এখন একাট্টা।

এমনটাই চিত্র চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের। এবারে কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে চান এই ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ। তিনি দল পাল্টিয়ে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নৌকা প্রতীক পেয়ে চেয়ারম্যানও হয়ে যান। তবে জেতার পর থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে তিনি সেখানে বিএনপিপন্থীদের নিয়েই সব কাজ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। আর সেজন্য এবারে আবদুল ওয়াহেদকে ঠেকাতে অনেকটা একাট্টা হয়েছেন কলাউজান ইউনিয়ন, লোহাগড়া উপজেলা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের যিনি বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ তিনি একসময় যুবদল সভাপতি ছিলেন। বিএনপি মানসিকতার মানুষ। তবে গতবার তিনি দল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে আসেন। সেবার অন্য কেউ নির্বাচন করতে না চাওয়ায় তিনি মনোনয়ন পেয়ে যান। তবে তিনি এই পর্যন্ত দলের জন্য কোন কাজ করেননি। তার বিভিন্ন কাজের ফলে বিএনপির লোকজনই বেনিফিশিয়ার হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান এই সরকারের ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ১০ টাকার চাল প্রকল্পে যাদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন, তারা সকলেই বিএনপির কর্মী। এবং সেই চালের সঠিক বণ্টনও হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এইবার তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে না। যদি কোনভাবে তার নাম যায়ও আমি কেন্দ্রে ডিওলেটার পাঠাবো’— যোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এইবার আসলে আমরা কেন্দ্রে বিতর্কিতদের নাম পাঠাবো না। অন্য দল থেকে আসা যাদের এভিডেন্স আছে তাদের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এর মধ্যেই এইসব বিষয়ে কথা বলেছি। কেন্দ্র থেকেও নির্দেশনা হলো— দলে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সচেতন থাকার। কলাউজানে বর্তমান চেয়ারম্যানের নামও কেন্দ্রে পাঠানো হবে না।

এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী আরেকজন মো. জাহাঙ্গীর আমিন, যিনি উপজেলা নির্বাচনেও দলের বিপক্ষে কাজ করেছেন তার মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে মফিজুর রহমান বলেন, এইখানে কয়েকজন উপজেলা নির্বাচনেও দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছেন। আমরা বিভিন্নভাবে তা জেনেছি। তাদেরকে কোনভাবেই দল থেকে মনোনয়ন যাতে দেওয়া না হয়, আমরা কেন্দ্রে সেভাবেই নাম পাঠাবো।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইছহাক মিয়া বলেন, গতবার নৌকার কোনো প্রার্থী ছিল না। তাই বিএনপি থেকে দলে যোগ দেওয়ায় তাকে সবাই সহযোগিতা করি। কিন্তু তিনি দলকে কোনঠাসা করে বিএনপিকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে তিনি সংগঠিত করেননি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাখতেন না। আমরা এইসব যথাযথ নেতৃবৃন্দকে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, যারা বিতর্কিত তারা যেন মনোনয়ন না পান আমরা সেটাই চাই। যেমন মো. জাহাঙ্গীর আমিন, উনিও মনোনয়ন প্রত্যাশি। উনার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কিন্তু তিনি দলের সভাপতির ও নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে গিয়ে লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এলডিপির সভাপতিকে নির্বাচনে জেতাতে কাজ করেছেন। প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন।

ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী এস এম জব্বার বলেন, গতবার আমি মনোনয়ন চাইনি। তাই সাবেক যুবদল সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মনোনয়ন পেয়েছেন। কিভাবে পেয়েছেন সেটা দক্ষিণ জেলা নেতারা জানেন। এইখানে রাজনীতির সম্পর্কে আপনি তো অবগত আছেন! এইখানে সভাপতি মোসলেম ভাই যেকোনভাবে ম্যানেজ করে ফেলেন। গতবার নমিনেশন নিয়ে বাবু ভাইয়ের ছেলে মন্ত্রী জাবেদ অনেক কথা বলেছেন না! সেগুলা পত্রিকায় বড় বড় শিরোনামও হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গতবার আমার স্ত্রীও নমিনেশন চেয়েছিল, তিনি দুইবারে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, প্যানেল মেয়র ছিলেন। আমাদের থেকে তো আর ‘টু-পাইস’ পাবে না। যাদের থেকে পাই তাদের ধরে কাজ হয়।

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু বলেন, দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দেবে। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান যুবদলের সাবেক সভাপতি হলেও তিনি দল পাল্টে আওয়ামী লীগে এসেছেন। ইউনিয়নে কিছু উন্নয়ন কাজ করেছেন। কিন্তু দলকে কোন সুবিধা দেননি। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করেননি।

হিরু আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ দল বিভিন্ন দল মতের লোক আওয়ামী লীগে আসতেই পারে। সবার জন্যই আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। তখন এগুলো সব দেখেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। তারাই তাকে দলে এনেছে। তিনি অনুপ্রবেশকারী হলে দল সেটা দেখবে। সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।

জানা গেছে, কলাউজান ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন— সাবেক যুবদল সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্রী নিবাস দাশ সাগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাশেম মিয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম আব্দুল জব্বার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইছহাক মিয়া, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোহাম্মদ এয়াছিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদ করিম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও এসএম সবুর।

তবে এসব অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে আবদুল ওয়াহেদ বলেন , ‘এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। যারা বলছেন তারা তাদের স্বার্থে এসব কথা বলছেন। আমি এসব প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে চাই না।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!