যুবদলের বিবাদ মেটাতে অনীহা নগর বিএনপির, দায়িত্ব গেল টুকুর হাতে

নগর বিএনপির সমাবেশে মারামারির ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও সমাধানের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। মারামারির পর মামলা-পাল্টা মামলা দায়ের হওয়ায় নগর বিএনপি নেতারা বসে সমাধানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেকটা অনীহাই দেখা যাচ্ছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

এ পরিস্থিতিতে যুবদলের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে।

উল্লেখ্য, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে নগর যুবদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিল্লুর রহমান জুয়েলসহ প্রায় ৮জন আহত হন। জিল্লুর রহমান জুয়েলকে যখন মেরে সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছিল তখন সমাবেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম। তিনি মাইকে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘সমাবেশে পকেট মার ঢুকেছে, তাকে আমরা বের করে দিয়েছি। আপনারা যার যার চেয়ারে বসে পড়ুন।’

এই ঘোষণার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সমাবেশে সংঘর্ষ শুরু হলে তা যাতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে আমি এটা বলেছি। এতে কাউকে ছোট বা হেয় করার উদ্দেশ্য ছিল না। আর আমাকে নগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আর ইউ চৌধুরী শাহীন এটা বলতে বলেছিলেন।’

নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আর ইউ চৌধুরী শাহীন বলেন, ‘আমি স্টেজের পেছনের সারিতে ছিলাম। কামরুলকে এটা বলার সুযোগ আমার ছিলনা, আমি বলিনি। আর ওরা তো আমাদেরই ছোট ভাই, তাদেরকে চোর বা পকেটমার বলতে যাবো কেন?’

ঘোষক স্বয়ং বিষয়টি স্বীকার করলেও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘এমন ঘোষণা আমি শুনিনি, বলতে পারবো না। আর আমরা ঢাকায় ছিলাম। দুয়েক দিনের মধ্যে তাদের সাথে বসবো। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।’

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এমন ঘোষণা দুঃখজনক, লজ্জাজনক। বিএনপি বড় দল, মতবিরোধ থাকবে। সংঘর্ষ অতীতেও হয়েছে। তাই বলে এভাবে ঘোষণা দেওয়া কোনভাবেই উচিত হয়নি।’

যুবদলের দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ভিপি হারুন বলেন, ‘যুবদলের দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ছাত্রদলের কাউন্সিল শেষে তিনি চট্টগ্রামের বিষয়টি নিয়ে বসবেন।’

সমাবেশের পরদিন (২ সেপ্টেম্বর) জিল্লুর রহমান জুয়েল বাদি হয়ে নগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি শামসুল হক শামসু, ফারুক, তৈয়ব, জসিমসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। রাতে শামসুসহ তার গ্রুপের নেতাদের সাথে নাসিমন ভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় তৈয়বকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন শামসুর অনুসারী আবু কালাম বাদি হয়ে নগর বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিল্লুসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত শামসুল হক শামসু নগর বিএনপির সদস্য। এ বিষয়টি নগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ চাইলে সমাধান করতে পারেন। আর দল যাকে দায়িত্ব দেন তার সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিতে বাধ্য।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!