ঢাকায় তৈরি হবে চট্টগ্রামের নগর পরিবহনের মাস্টারপ্ল্যান

জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। এই শহরের যানজট নিরসনের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত ছিলো। বিভিন্ন সেবা সংস্থা কর্তৃক একাধিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হলেও চট্টগ্রাম শহরের জন্য করা হয়নি কোন সমন্বিত পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান। সেবা সংস্থাগুলোও পরস্পরের সাথে সমন্বয় করেনি। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পরিবহন সেক্টর নিয়ে আলাদাভাবে ভাবেননি। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের জন্য একটি সমন্বিত ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে আগ্রহ দেখিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও একটি ‘পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ’ গঠন প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম শহরের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চিটাগাং মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান (সিএমএমপি), স্ট্রেটেজিক আরবান ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান (এসইউটিএমপি), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি অন এমআরটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম পোর্ট মাস্টার প্ল্যান আছে। কিন্তু এসব মাস্টার প্ল্যান/স্টাডি একে অন্যের সাথে সমন্বয় করে প্রণয়ন করা হয়নি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি এর উপর যে প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, সে দলে সবাই ছিলেন মূলত স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, পরিবহন বিশেষজ্ঞ নন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় পরিবহন পরিকল্পনা বিষয়ে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি মত বিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুবুল বারী বলেন, ‘যে কোন মাস্টার প্ল্যান তৈরির আগে পলিসি ঠিক করা প্রয়োজন। ফ্লাইওভার এবং মেট্রোরেল একসাথে হতে পারে না। মাস্টারপ্ল্যানে নিশ্চিত করতে হবে যে, আরবান এলাকায় কোন ফ্লাইওভার যেন না থাকে।’

ওই সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ডিটিসিএ-এর অধীনে একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য অনেকগুলো মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও পরিবহনকে নিয়ে আলাদা করে কোন বড় পরিকল্পনা নেই। পরিবহনকে টার্গেট করে কোন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়নি। মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তারা পরিবহনের বিষয়টি চিন্তা করেননি।’

ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের জন্য কোন কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান নেই। পূর্বের এবং প্রস্তাবিত মাস্টার প্ল্যান/স্টাডিগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা প্রয়োজন। মাস্টার প্ল্যানে বর্ণিত সুপারিশ এবং স্টাডির ভিত্তিতে মুড অফ ট্রান্সপোর্ট নির্ধারণ করা যায়। চট্টগ্রামে যেহেতু একক কোন সমন্বয়কারী সংস্থা নেই, তাই চট্টগ্রামের জন্য কমপ্রিহেনসিভ ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান/স্টাডি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করা যেতে পারে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া বলছেন, ‘মাস্টার প্ল্যান করার দায়িত্ব সিডিএর। সমন্বিত ব্যবস্থা চট্টগ্রামে নেই। সিডিএর যে মাস্টার প্ল্যান করেছে, তারা নিজেরাই সেটি বাস্তবায়ন করছে না। অন্যান্য দেশে সিটি করপোরেশনের উপর সব দায়িত্ব থাকে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। আমরা একটার পর একটা মাস্টার প্ল্যান করছি, আর টাকা খরচ করছি। মাস্টার প্ল্যানে যেগুলো প্রায়োরিটি ছিল না, সেগুলো করা হচ্ছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে, কিন্তু চট্টগ্রামে তা করা হয়নি। সেটা চট্টগ্রামে করা হোক। সিডিএর মাস্টার প্ল্যানে পরিবহনের বিষয়টি আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয়নি।’

অতীতের মাস্টার প্ল্যানগুলোতে পরিবহনের উপর যথাযথ জোর দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন চউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অতীতের মাস্টার প্ল্যানে ট্রান্সফরটেশন উইং করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। পরিবহনের সাথে চালক, গাড়ি মালিক, তেল সরবরাহকারী, সিটি করপোরেশনসহ অনেক কিছু জড়িত। নুতন মাস্টার প্ল্যানের চেয়ে সিডিএর মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা দরকার, মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য।

বর্তমানে সময়ে সমন্বিত পরিবহন মাস্টার প্ল্যান প্রযোজন বলে মনে করেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে এক্ষেত্রে তিনি দায় চাপিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের উপর। জানতে চাইলে আ জ ম নাছির বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করবে ট্রাফিক বিভাগ। সিটি করপোরেশন করবে না। সময়ের চাহিদা ও যুগের পরিবর্তনে সমন্বিত পরিবহন মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন। আমাদের উত্তরসূরীরা সব সলিউন করেছেন অ্যাডহক ভিত্তিতে। এখন সময়ের পরিবর্তনে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। মাস্টার প্ল্যান ছিল, কিন্তু কার্যকর করা যায়নি।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!