ম্যাক্স হাসপাতালে ভুয়া বিল, ধরিয়ে দেওয়ার পর মাফ চেয়ে টাকা কমালো (ভিডিওসহ)

ডাক্তার বললেও হাই ফ্লো অক্সিজেন দেয়নি, কিন্তু বিল ঠিকই ধরেছে

শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ সাইফুদ্দৌলা খানকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ ছিল ডাক্তারের। ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর স্বজনরা জানতেন সেভাবেই চলছে চিকিৎসা। তিনদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর মারা যাওয়া ওই রোগীর বিলেও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিল যুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায় রোগীকে অক্সিজেন দিতে আদতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারই হয়নি।

শুধু হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার চার্জই নয় আরও বিভিন্ন ভুয়া খাত দেখিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল করে হাসপাতালটি। পরে দুই দফায় রোগীর স্বজনদের চ্যালেঞ্জের মুখে সেটি ৮৩ হাজার টাকা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজারে। দুই দফায় বাদ যাওয়া এই ৮৩ হাজারের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ৪১ হাজার ৮১৪ টাকা ডিসকাউন্ট দেখানো হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন কোন রকমের ছাড় নয় বরং বিভিন্ন ভুয়া খাতে এসব বিলের বোঝা চাপিয়েছিল ম্যাক্স হাসপাতাল। যাকে এক কথায় বানোয়াট বিল বলছেন সাইফুদ্দৌলা খানের স্বজনরা।

সাইফুদ্দৌলা খান গত ২৯ জুন দুপুর সাড়ে তিনটায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার (৪ জুন) সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটের সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিলেও তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি।

ম্যাক্স হাসপাতালে ভুয়া বিল, ধরিয়ে দেওয়ার পর মাফ চেয়ে টাকা কমালো (ভিডিওসহ) 1

সাইফুদ্দৌলা খানের শ্যালক ইয়াসির আরাফাত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার দুলাভাই গত তিন দিন ধরে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উনাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ ছিল ডাক্তারের। হাসপাতাল থেকেও আমাদের বলা হয় উনাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর পর কেবিনে গিয়ে আমি তেমন কোন মেশিন না দেখায় তাদের জিজ্ঞেস করি। তখনও তারা আমাকে বলে যে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দেওয়া হয়েছে। পরে যখন আমি চ্যালেঞ্জ করি, তখন তারা জানায় মেশিন ব্যবহার করেনি। অথচ বিলে এই বাবদ চার্জ করা হয়েছে। পরে তারা এক দফায় বিল সংশোধন করে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮১৪ টাকার সংশোধিত বিল দেয়।’

হাতেনাতে এমন প্রতারণায় ধরা খেয়ে সংশোধন করা বিলেও অনেক অসঙ্গতি ছিল জানিয়ে ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘একবার সংশোধন করার পর সংশোধিত বিলেও দেখি অনেক অসঙ্গতি। যেমন তারা বলেছিল প্রতিদিন পিপিই দেবে কিন্তু দেয়নি। অথচ সেটার চার্জ বিলে ছিল। ডাক্তার কলের ভুয়া চার্জও ছিল। এসব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার পর আবারও তারা বিল সংশোধন করে। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিল আসে।’

তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল থেকে আমরা ধরে ধরে ৮৩ হাজার টাকার ভুতুড়ে বিল বের করেছি। পরে তারা আমাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু আমার কথা হলো যে রোগীকে যে সেবা দেওয়ার দরকার ছিল তা না দিয়ে কী ধরনের চিকিৎসা তারা করছে? তার ওপর এই ধরনের ভুয়া খাত দেখিয়ে বিল করা হচ্ছে। এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার।’

এই বিষয়ে সার্ভিল্যান্স টিমের দ্বারস্থ হচ্ছেন জানিয়ে ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘তারা যদিও বিল সংশোধন করে ক্ষমা চেয়েছে। তবু আমার মনে হয় বৃহত্তর স্বার্থে এর একটা প্রতিকার হওয়া উচিত। আমি এর মধ্যে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। আমি সার্ভিল্যান্স টিমের আহবায়ককেও এই বিষয়ে অভিযোগ দেবো।’

এই অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ম্যাক্স হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন প্রসাদ দাশ গুপ্তের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!