ম্যাক্সের সৌজন্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে মানুষ

সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। গর্ত আর জলাবদ্ধতার কারণে ছোট হয়ে গেছে সড়কের পরিধিও। তার ওপর যোগ হয়েছে কনটেইনার ডিপোর শত শত লরি ও কাভার্ড ভ্যানের দীর্ঘ যানজট। এতে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন কর্মজীবী মানুষ। এছাড়া যানবাহনের চালক ও পথচারীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় এই সড়কে। বর্ষায় নির্মাণকাজ চলা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কের দুরবস্থা এমনই।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা, সিমেন্ট ক্রসিং, নেভী হাসপাতাল, ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, কাস্টমস মোড়, নিমতলা ও বারেক বিল্ডিং মোড়ে যানজট লেগেই আছে। যতোই বেলা বাড়তে থাকে ততোই যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন যানজট প্রতিদিনই দেখেন তারা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, এই বর্ষায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গামুখী প্রধান সড়কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজের পয়ঃনিষ্কাশন না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সড়কটিতে পথচারীদের হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে।

ম্যাক্সের সৌজন্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে মানুষ 1

ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা ব্যাংকার বুবলি আকতার বলেন, ‘সিমেন্ট ক্রসিং থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই এলাকায় সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন অফিসে দেরি হচ্ছে। দেরির জন্য বসের বকাও শুনতে হয়। রাস্তায় গর্ত আর পানির কারণে কখন যে গাড়ি উল্টে যায়, এটা নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি।’

বেশ কয়েকজন চাকরিজীবী জানান, বর্ষা এলেই ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। এখানে সাধারণ পরিবহনের চেয়ে বেশি গাড়ি চলে চট্টগ্রাম বন্দর ও পতেঙ্গা ডিপোর কনটেইনারবাহী ভারি গাড়ি। আরও যোগ হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিকল্প সড়ক তৈরি না করে এখানকার লোকজনকে চরম বিপদে মুখে ঠেলে দিয়েছে।’

স্থানীয় কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের অব্যবস্থার কর্মযজ্ঞের কারণে এখানকার বাসিন্দারা যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রতিনিয়ত। নির্মাণকাজ ধীরগতি ও সড়কজুড়ে যত্রেতত্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নির্মাণসামগ্রী রাখায় ছোট হয়ে গেছে এখানকার সড়েকর পরিধি। আরও যোগ হয়েছে বৃষ্টির পানি। যানজটের কারণে বাসা থেকে বের হতে ভয় পান অনেকেই।’

ইপিজেড থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) সেলিমুল রহমান বলেন, ‘সারাদিন বৃষ্টির পানিতে ভিজে ট্রাফিক সদস্যরা কতক্ষণ ডিউটি করতে পারে? একদিকে বন্দরের ভারি যানবাহন, অন্যদিকে পতেঙ্গার ডিপোর গাড়ি চলাচলের কারণে সাধারণ পরিবহন চলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। যানজট থেকে সহসা মুক্তি পেতে হলে বর্ষায় অন্তত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার বিকল্প নেই।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সড়ক দখল ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ করায় ওই এলাকায় সড়কে বড়-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সিমেন্টক্রসিং থেকে ইপিজেড এলাকায় রাস্তার বেশিরভাগ অংশ টিনের ঘেরা। সড়কের পরিধি ছোট হওয়ায় প্রতিদিন বন্দর ও ডিপোর ভারি যানবাহন চলা যথেষ্ট নয়।’

চট্টগ্রাম সিপি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপাতত ওই সড়কের ব্রিক ও বালি দিয়ে যানচলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। বর্ষায় যদি সড়কের সংস্কার করা হয়, তাহলে চসিকের পুরো অর্থটা জলে যাবে। তারপরও আগামী শনিবার সেখানে সরেজমিনে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নিব।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সিমেন্টক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পথের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চললেও সিমেন্টক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি শূন্যের ঘরে।

এএইচ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!