সৎপিতার অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানেই তরুণী খুন মোহরায়

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরায় দিনদুপুরে ছুরিকাঘাতে রেহা নামের তরুণী নিহতের রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি ঘাতক সৎ পিতাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (২১ জুলাই) রাউজান থানার মদের মহাল এলাকা থেকে নুরুন নবীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, শারিরীক সম্পর্ক করতে ব্যর্থ হয়েই নিজের ১৬ বছর বয়সী সৎকন্যা রেহাকে ছুরিকাঘাত করেই খুন করেন নুরুন নবী।

এর আগে ৬ জুলাই বিকেল পাঁচটার দিকে মোহরার খেজুরতলার রেললাইনের ওপর খুন হন রেহা। এখানে সিঁড়ির গোড়া নামে একটি রাস্তা পারাপারের সিঁড়ি আছে, যা দিয়ে লোকজন রেললাইন পারাপার করে থাকেন। নিহত রেহা সাতকানিয়ার বাসিন্দা নবীর সৎ মেয়ে। তিনি নবীর ধর্মান্তরিত স্ত্রী আরতি ওরফে নাসিমার মেয়ে। রেহা তার সৎ পিতা নবী ও মা নাসিমার সঙ্গে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে থাকতেন। তবে ঘটনার আগের দিন খালা পূর্ণিমার বাসায় বেড়াতে আসে।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ চাকমার নেতৃত্বে একটি দল রাউজানের মদের মহাল থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ কাজের বেশে আত্মগোপনে থাকা নুর নবীকে গ্রেপ্তার করে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়ার কাছে হাস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আবেদন করলে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত রেহা সাতকানিয়ার বাসিন্দা নবীর সৎ মেয়ে। তিনি নবীর ধর্মান্তরিত স্ত্রী আরতি ওরফে নাসিমার মেয়ে। রেহা তার সৎ পিতা নবী ও মা নাসিমার সঙ্গে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে থাকতেন। রেহার বয়স যখন দুই বছর, তখন নিজ স্বামীকে ত্যাগ করে নবীকে বিয়ে করেন মা আরতি। তখন মা মেয়ে দুজনই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন নাম পাল্টে আরতি নিজের নাম রাখেন নাসিমা আর মেয়ে সোমার নাম রাখেন রেহা। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আরতির বোন পোশাককর্মী পূর্ণিমার (সম্পর্কে রেহার খালা) মোহরা খেজুরতলার বাসায় বেড়াতে আসে রেহা। কথামত শুক্রবার (৫ জুলাই) রেহাকে সাতকানিয়ার বাসায় পাঠিয়ে দেন খালা পূর্ণিমা। সেই দিন রাতেই সাতকানিয়ার বাসায় রেহার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করতে চায় সৎ পিতা নুরুন নবী। কিন্তু এতে বাধা দেন মা মেয়ে দুজনেই।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় রাগ করে আবার সাতকানিয়া থেকে মোহরায় খালা পূর্নিমার বাসায় চলে আসে রেহা। তার পিছু নেন নুরুন নবীও। এর আগে সাতকানিয়া থেকে একটি ছুরি কেনেন তিনি। শনিবার (৬ জুলাই) যখন বিকেলে রেহা তার খালার বাসায় আসছিলো তখন রেল লাইনের ওপর ধরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রেহা। পালিয়ে যাওয়ার সময় নুরুন নবীর গলায় থাকা গামছা ও পায়ের জুতা জোড়া ফেলে যায়। এসব দেখে রেহার মা নাসিমা তার স্বামীর বলে পরে পুলিশকে জানান। হত্যার পর পর খালি পায়ে সাতাকানিয়ার কেরানীহাটের বাসায় চলে যান নুরুন নবী। তখন তার স্ত্রী নাসিমার কাছে কিছু না বললেও যখন নাসিমা খবর পান তার মেয়ে মোহরায় খুন হয়েছে তখন স্বামীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। পরে স্ত্রী নাসিমার সন্দেহ হলে পরের দিন সকালেই রাউজানে পালিয়ে যান। সেখানে আত্মগোপন করে রাজমিস্ত্রিও কাজ করছিলেন।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নুরুন নবী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৎমেয়ে রেহার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়ে রাগ থেকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। আমরা খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও গামছা জুতা জোড়া উদ্ধার করেছি। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খুনের বিস্তারিত জানতে পারব।’

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!