মোহরায় সামান্য তদবিরেই মেলে রোহিঙ্গার এনআইডি!

অভিযুক্ত কাউন্সিলর আজম

তদবির ও রাজনৈতিক সুপারিশে পরিচিত লোকজনদের মাধ্যমে ওয়ার্ড থেকে সনদ দেওয়া হয়। সেখানে পরিচিতজনদের এসব রেফারেন্সের কারণে ঠিকমতো যাচাই বাছাই সম্ভব নয়। এভাবে ওয়ার্ড থেকে জাতীয়তা সনদ ও জন্ম সনদ নিতে পারে যে কেউ অনায়াসেই। তবে কিছু অসৎ লোকের মাধ্যমে এই ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানায় রোহিঙ্গারা— এমন দাবি করলেন সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম।

এদিকে দুদক বলছে, এসব সনদ কম্পিউটারে প্রিন্ট হলেও যাচাই-বাছাই না করে কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করেন। এর ফলেই অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কারসাজি ও প্রতারণার আশ্রয়ে ভোটার হয় রোহিঙ্গারা।

এমন অপকর্মের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযুক্তরা হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আজম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিযুক্ত ওয়ার্ড জন্ম নিবন্ধন সহকারী মিতা দে এবং ওই ওয়ার্ডের সচিব।

জানা গেছে, অসৎ উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি পাওয়া রোহিঙ্গারা হলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সওদাগর পাড়ার রশিদ আহমদের পুত্র নুরুস সাফা এবং বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ২৪০ আরমান ম্যানশন এলাকার বাসিন্দা, চান্দগাঁও থানার হামিদচর মোহরা এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদের মেয়ে সাইকা বেগম, একই এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদের মেয়ে সুফিয়া বেগম, একই থানার মোহরা আবাসিক এলাকার লালমিয়ার বাড়ির মৃত মোহাম্মদ মুছার মেয়ে মোছাম্মদ মোবারেখা, বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার জিউধরা গ্রামের মো.কাঞ্চন আলী জজের মেয়ে হাছিনা বেগম ও বর্তমানে চান্দগাঁও থানার আটগাছতলা ব্যাটারি গলির বাসিন্দা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ড থেকে কোন রোহিঙ্গাকে এনআইডি দেওয়া হয় না। আমার স্বাক্ষর জাল করে কম্পিউটার থেকে হয়ত সনদ বানিয়ে এটা করতে পারে। রাজনৈতিক তদবির ও সুপারিশেও অনেক জাতীয় সনদ ও জন্ম নিবন্ধন নিতে পারে। এখন কারা কখন কিভাবে চোখ ফাঁকি দিয়ে নেয় তা আর বলতে পারবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে সচেতন হব। ভুল হলেও এই ধরনের কাজ ভবিষ্যতে যেন না হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত চলছে। সাম্প্রতিক অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরকে দুদক থেকে চিঠি ইস্যু করে তলবও করা হয়। এই তদন্ত চলমান রয়েছে। এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাসহ তাদের সম্পদেরও হিসাব নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেকে অর্থের বিনিময়ে পেয়ে যায় দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এই এনআইডি দিয়ে আবার অনেকে পাসপোর্টও তৈরি করে। এদের মধ্যে বড় অংশ বিদেশেও চলে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একটি টিম তদন্ত শুরু করে। এতে প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে অধিকতর তদন্তের অনুমতি চেয়ে কমিশন বরাবরে এই ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমতি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!