মোরশেদ খান কী আদৌ নির্বাচন করছেন?

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়েও জানেন না তিনি

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার বৈঠা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদের হাতে তুলে দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও নিশ্চিত করেছেন ধানের শীষের প্রার্থীও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যা শুধু ঘোষণাই বাকি। বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের দলত্যাগের পরও তার অনুসারীরা প্রচার করছেন তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। অনুসারীরা তার হয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন ফরমও কিনেছেন। মোরশেদ খান কী করছেন, তিনি কী আদৌ নির্বাচন করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘না। সোমবার সন্ধ্যায় তার সাথে যোগাযোগের পর তিনি বলেন, ‘আমার শারীরিক সীমাবদ্ধতায় আমি দলকে বলে দিয়েছি আমি নেই।’
নির্বাচনী আসনে মোরশেদ খানের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। মোরশেদ খানের অধিকাংশ অনুসারীই এখন সুফিয়ানের হাত ধরে রাজনীতি করছেন।

কিন্তু চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ও মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম, সাধারণ সম্পাদক শরীফ খান, নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আরইউ চৌধুরী শাহীন এখনো দলের মোরশেদ খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে শরীফ খান মোরশেদ খানের হয়ে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করে দলে কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়েছেন। কিন্তু তিনজনই একই সুরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানালেন, ‘দলের পদে থেকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আমি দলের একটি থানার দায়িত্বে আছি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার হয়ে কাজ করবো।’

সাধারণ সম্পাদক শরীফ খান বলেন, ‘মোরশেদ খান পদত্যাগ করলেও দল থেকে তার পদ হারানোর কোন ঘোষণা আসেনি। দলের হাই কমান্ড থেকে বলা হয়েছে মিলেমিশে এক হয়ে কাজ করতে। তাই উনার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই আমরা কাজ করবো। কারণ আমি ১৯৮৪ সাল থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে আছি। ছাত্রদল, যুবদল হয়ে এখন বিএনপির থানা সেক্রেটারি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আরইউ চৌধুরী শাহীন বলেন, ‘যেহেতু দলের দায়িত্বশীল পদে আছি দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার হয়েই আমরা কাজ করবো।’

এম মোরশেদ খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হলেও সময়ের ব্যবধানে এখন যারা সুফিয়ানের সাথে রাজনীতি করছেন তারা হলেন বোয়ালখালী পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আবু, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খান, সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক মান্নান চেয়ারম্যান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসহাক, বায়েজিদ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জসিম, মোহরার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন আহমদ, নগর বিএনপির সহসভাপতি ও চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম, নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইস্কান্দার মির্জা, শামসুল আলম, মঞ্জুরুল আলম, সহ-সম্পাদক জিএম আইয়ুব খান প্রমুখ।

মোস্তাক খান দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতি করি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির, ধানের শীষের। বিএনপি যার হাতেই ধানের শীষ তুলে দিবে আমরা তার হয়েই কাজ করবো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে এখন পর্যন্ত বিরামহীনভাবে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু সুফিয়ান। নেতাদের সুখ-দুঃখে তিনি পাশে আছেন। নেতাকর্মীরাও সুফিয়ানের জন্য পাগলপারা। এখানে ভিন্ন কিছু বা অন্য কাউকে নিয়ে ভাববার সময় আমাদের নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘কেউ যদি ভাবেন আমি মোরশেদ খানের অনুসারী তাহলে সেটা ভুল হবে। আমি দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ভাইয়ের হাত ধরে নগর বিএনপির রাজনীতি করেছি। নগর ছেড়ে বোয়ালখালীর মাটির টানে এলাকায় রাজনীতি করছি। এটা সত্য মোরশেদ খান আমাকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পর্যন্ত আনতে ভূমিকা রেখেছেন। সেটা ছিল আমার কাজের মূল্যায়ন। মোরশেদ খানের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তিনিও এটা করতেন।’

বোয়ালখালী পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আবু বলেন, ‘দলের কোন নেতাকর্মী মোরশেদ খানের সাথে নেই। গণমানুষের সাথেও তার কোন সংযোগ নেই। মাঠে আছি আমরা। নেতা-কর্মীরা আমাদের সাথে, গণমানুষও সুফিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। খান সাহেব এখন জিরো। নির্বাচন করেও কোন লাভ হবে না। জাস্ট আলোচনায় থাকার জন্য তিনি নির্বাচন করার কথা বলছেন।’

বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থাকা সাবেক এই হেভিওয়েট নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন করবো কাউকে বলিনি। দলকে বলে দিয়েছি আমার শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে। আর কন্টিনিউ করতে পারছিনা। আমি আর দলে নেই।’

তবে দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘শরীফ খান মনোনয়ন ফরম কিনে বেকায়দায় পড়াতে মোরশেদ খান পিছু হটেছেন। তিনি বেশ কয়েকজনকে বলেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। যাদের কাছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তাদের বরাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রচার হয়েছিল ‘বাদলের আসনে নির্বাচন করছেন মোরশেদ খান’!

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!