বিএনপিত্যাগ/ ৩ কারণে ছিন্ন মোরশেদ খানের ৩০ বছরের বন্ধন

বহু বছরের বন্ধন ছেড়ে অবশেষে বিএনপি ছাড়লেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বরাবরে পাঠানো পদত্যাগপত্রের মাধ্যমে দলটির সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানলেন ১৯৪০ সালের ৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই শিল্পপতি-রাজনীতিবিদ। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালে মোরশেদ খান বিএনপিতে যোগ দেন।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ করা হলেও মোরশেদ খানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সূত্রগুলো বলছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অবজ্ঞা, গত সংসদ নির্বাচনে তাকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে মনোনয়ন না দেওয়া এবং চট্টগ্রামসহ কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি ও তার অনুসারীদের কোণঠাসা করে রাখার কারণেই দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মোরশেদ খান অবশ্য বলেছেন, ব্যক্তিগত কারণেই তার এই পদত্যাগ। তিনি বলেন, ‘অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে আমার উপলব্ধি হয়েছে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’

পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান লিখেছেন, ‘মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সে ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।’

তিনি লিখেছেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণ হেতু আমার উপলব্ধি— সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ (৫ নভেম্বর) থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে ‘অলঙ্কৃত’ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান আরও লিখেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য নেতাকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত এবং অনেকেই বর্তমানে দলের হাল ধরে আছেন। প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি যেমন কামনা করি, তেমনি আপনিসহ বর্তমান সব কর্মী-কাণ্ডারিদেরও আমি মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী। অতীত ও বর্তমান সব কর্মীর নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য, সখ্য, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং দলের কর্মী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিএনপি আমাকে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে।’

জানা গেছে, মূলত তিন কারণে মোরশেদ খান পদত্যাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদকে এজন্য দায়ী করেন মোরশেদ খানের অনুসারীরা। মনোনয়ন না পাওয়ার বঞ্চনাই শুধু নয়, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। এমনকি মোরশেদ খানের নিজের সংসদীয় এলাকা বোয়ালখালী-চান্দগাঁওয়ে দলীয় বিভিন্ন কমিটিতে তার অনুসারীদের সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া জায়গাই দেওয়া হয়নি। এছাড়া দলের ভাইস-চেয়ারম্যান হয়েও তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তিনি অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন— এমন অভিযোগ মোরশেদ খানের অনুসারীদের।

১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর তিনি আরও তিনবার (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, জুন ১৯৯৬ ও ২০০১) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ছিলেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর চেয়ারম্যানও ছিলেন। মোরশেদ খান ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!